অন্তবর্তীকালীন সরকারের সম্মতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তারল্য সংকটসহ নানা সমস্যায় পড়া পাঁচটি ইসলামি ধারার ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। প্রাথমিকভাবে নতুন এ ব্যাংকের জন্য ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা মূলধন দেবে সরকার। তবে ব্যাংকটির মোট মূলধন হবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে এটি দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে আয়োজিত এক সভায় এসব আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী) আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেকসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংক হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এই ৫ টি ব্যাংকের মধ্যে ৪টিই ছিল আর্থিক খাতে অনিয়মের জন্য ব্যাপক সমালোচিত ব্যক্তি এস আলমের মালিকানায়। আর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
পাঁচ ব্যাংকের একীভূতকরণ কার্যক্রমটি এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে শেষ করতে চায় সরকার। এ জন্য সময়ভিত্তিক কর্মকৌশল চূড়ান্ত করতে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সভা থেকে জানা যায়, এই ব্যাংক একীভূত করার আগে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন ব্যাংকটির সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। সরকারের মূলধনে এই ব্যাংক গড়ে উঠবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের সম্পদ ও দায় এই ব্যাংকের অধীনে চলে আসবে। এরপর ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করবে। এই ব্যাংক মুনাফা করতে শুরু করলে এর শেয়ার বেসরকারি খাতে ছাড়বে সরকার। এর মাধ্যমে সরকার বিনিয়োগ ফেরত নেবে। পাশাপাশি পাঁচ ব্যাংকের বড় আমানতকারীদেরও শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব করা হবে। ছোট আমানতকারীরা টাকা তুলে নিতে চাইলে তাতে বাধা দেওয়া হবে না। এতে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আরও জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ভিত্তিক কর্মকৌশল চূড়ান্ত করে ডেপুটি গভর্নর মো. কবির আহম্মদের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংককে নিয়ে শুনানি করেছে। শুনানিতে ব্যাংকগুলোর কাছে শেষবারের মতো জানতে চাওয়া হয় কেন তাদের একীভূতের আওতায় আনা হবে না। এর মধ্যে বিনা বাক্যে একীভূত হতে সম্মত হয় তিনটি ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। তবে একীভূত হওয়ার তালিকায় থাকা অন্য দুটি ব্যাংক সময় চায়। ব্যাংক দুটি হলো এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশি–বিদেশি নিরীক্ষকদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করে জানিয়ে দিয়েছে, একীভূত হওয়া ছাড়া এসব ব্যাংকের জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই।
গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বও বদল হয়। গভর্নরের দায়িত্ব পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাপক লুটপাটের শিকার হওয়া বেশ কিছু ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নেন। শেষ পর্যন্ত তা উল্লিখিত পাঁচটিতে এসে ঠেকেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, ব্যাংক একীভূত হবেই, এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে। ব্যাংক একীভূতকরণের আলোচনা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে আমানত নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকবে। সরকার আমানতকারীদের দায়িত্ব নেবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.