বাণিজ্যবিষয়ক দর–কষাকষির ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে জটিলতা আছে। রপ্তানিতেও বৈচিত্র্য নেই। দেশে তৈরি বেশির ভাগ পণ্যের কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করা হয়। তারপর মূল্য সংযোজন করে তা রপ্তানি করা হয়।
এ বাস্তবতায় অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যবিষয়ক দর–কষাকষিতে আমাদের হাতে তেমন কৌশলগত সুবিধা নেই। ফলে বাণিজ্য আলোচনায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাণিজ্যবিষয়ক দর–কষাকষিতে জাতীয় সক্ষমতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের এ সময় বাণিজ্য আলোচনায় সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে দেশের জন্য অনুকূল বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আলোচনার মূল ভিত্তিই ছিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যঘাটতি। এ ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের আরও ভালো প্রাপ্য ছিল। তবে যেটা পাওয়া গেছে, সেটাও একেবারে খারাপ না।
এদিকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাণিজ্যবিষয়ক দর–কষাকষিতে অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় ঘাটতি নেই; বরং নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ঘাটতি আছে। তাই অনেক বিষয়ে আমাদের আলোচনা শুরু হলেও শেষ হয়নি। সরকারের বেশির ভাগ কর্মকর্তার মধ্যে এখনো তথ্যভিত্তিক আলোচনার সংস্কৃতি নেই। শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কোনো বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠালে উত্তর আসতে মাসের পর মাস সময় লাগে। তারপর ছয় মাস পর যখন উত্তর পাঠায়, তখন দেখা যায়, অপর পক্ষ সব ভুলে গেছে। একবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দেওয়া এক চিঠির উত্তর আসার অপেক্ষায় তারা ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু ও শেষ করে ফেলেছে।
আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আরও বলেন, সরকারে যোগ দেওয়ার পর আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সে সময় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি উঠে আসে। তখন আমাদের কয়েকটি দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিছু আলোচনায় বেশ অগ্রগতিও হয়েছিল। কিছু সরকারি কর্মকর্তাকেও বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। একদিন তিনি হঠাৎ ফোন পেলেন, একজনকে বদলি করে মৎস্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এক সপ্তাহ পর আরেকজনকে বদলি করা হয়। ফলে বাণিজ্যবিষয়ক নানা আলোচনায় আমাদের সামষ্টিক সক্ষমতা কমে যায়।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান, বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার ওয়েইস প্যারে ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাকসহ প্রমুখ।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.