প্রতারণার মাধ্যমে রিট পিটিশন দাখিল করে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি)-এর চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির এবং মহামান্য আদালতের সাথে প্রতারণা করার দায়ে এম.এ. সবুর, বশির আহমেদ, শওকত আজিজ (রাসেল), বজল আহমেদ, আহমেদ আরিফ বিল্লাহ ও সুজন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে আদালত ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন এবং মামলার বিষয়ে ভবিষ্যতে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ইউসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদ, যা সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্বে ছিল, তা ভেঙে দেয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় এই গ্রুপটির ২৩ জনের বিরুদ্ধে শেয়ার জব্দ দাবি করে আদালত নির্দেশও জারি করেন। এরপর এই গ্রুপটিরই একাংশ গত জুলাইতে ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারহোল্ডার এবং কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ১৯৯৪-এর ২৩৩ ধারার অধীনে পিটিশন দাখিল করে। তারা পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্ডার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। রিটকারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রথমে হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ এজিএম স্থগিত করে আদেশ দেন। তবে, আপিল বিভাগের চেম্বার জজ পরে এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি দেন এবং তা কার্যকর হয়।
কিন্তু সম্প্রতি ইউসিবির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান (সুপ্রিম কোর্ট) জানান, কয়েকজন পিটিশনকারী দেশেই ছিলেন না, অথচ তারা হলফনামা জমা দিয়েছেন যেন তারা স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এতে শপথ কমিশনার এবং আদালতকে প্রতারিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডিংয়ের যোগ্যতা দেখানো হয়েছে, যা ব্যাংকের সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।
ইউসিবির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা যুক্তি দেন, পিটিশনকারীদের এ আচরণ প্রতারণার শামিল এবং এর মাধ্যমে ব্যাংকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমানে ইউসিবি চলমান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আমানতকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর ফল হিসেবে এ বছরের প্রথম আট মাসেই ৯,৫০০ কোটি টাকারও বেশি নেট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি এবং ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন একাউন্ট খোলা হয়েছে, যা একটি রেকর্ড।
আদালত রায়ে পিটিশনকারীদের একই বিষয়ে নতুন মামলা দায়েরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২ লাখ টাকা ইউসিবি-কে এবং ৩ লাখ টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও মার্শাল অফিসে জমা দিতে হবে।
রায়ের ফলে বশির আহমেদ ও তার সহযোগীদের শুধু মোটা অঙ্কের জরিমানাই বহন করতে হবে না, বরং তাদের সুনামও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ব্যাংকিং খাতে একটি শক্ত বার্তা—যে কোনো ধরনের সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার প্রচেষ্টা এখন আদালতের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে এবং দায়ীদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.