বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধজনিত অস্থিরতার পরও চলতি বছরের নভেম্বর মাস নাগাদর সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিবিসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানি পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। সে কারণে যে বিঘ্ন তৈরি হয়েছে, এ প্রসঙ্গে পীযূষ গয়াল বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত অস্থির, অনিশ্চিত সময়ে বসবাস করছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ভয়ভীতি আছে।’ ২১তম বার্ষিক গ্লোবাল ইনভেস্টর কনফারেন্স ২০২৫-এ দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী।
পীযূষ গয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাণিজ্যিক বিষয়ের চেয়ে ভূরাজনৈতিক বিষয় খানিকটা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। তবে তাঁর আশা, শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং দুই দেশের নেতারা গত ফেব্রুয়ারিতে যে আলোচনা করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের নভেম্বর নাগাদ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি করা যাবে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে ভার্চ্যুয়াল ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি ভারত ও ব্রাজিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির বেলায় হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তারপরও ভারত সরকার আশাবাদী, শেষমেশ দুই দেশই আপসের পথ খুঁজে নেবে।
দেশের আসন্ন সংস্কারের প্রসঙ্গে পীযূষ গয়াল বলেন, জিএসটি দুই সংস্কার ভোক্তাদের আস্থা বাড়াবে এবং বাজারে চাহিদা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, এ সংস্কারের ফলে জিএসটি–সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ ও সরল হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত কর ও করপোরেট কর—উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য কাটছাঁট করেছে। করপোরেট কর এখন ২৫ শতাংশ, স্বাধীনতার পর যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
বিষয়টি হলো অনেক বছরের আলোচনার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে জিএসটি হার কাঠামোর বহুল প্রত্যাশিত সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমান ৫, ১২, ১৮ ও ২৮ শতাংশ করহারের পরিবর্তে সরকার এখন ৫ ও ১৮ শতাংশ—এই দুটি হার এবং বিলাসপণ্য ও ক্ষতিকর সামগ্রীর জন্য বিশেষ ৪০ শতাংশ জিএসটি হারের প্রস্তাব করছে।
একই সঙ্গে গয়াল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির পরিবর্তন থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়েই নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং সরকার নিজেদের কাজের ধরন নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে উৎসাহিত হচ্ছে। প্রমাণ হলো, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি। গত পাঁচ বছরে কোনো এক প্রান্তিকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বেসরকারি খাতে মূলধন ব্যয় বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।
গয়াল জানান, সরকার বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে কাজ করছে। মরিশাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইতিমধ্যেই এফডিআই চুক্তি রয়েছে। তারপর রয়েছে পুরো ইএফটিএ ব্লক—নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, লিচেনস্টাইন ও আইসল্যান্ড…যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলাপ চলছে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। বাণিজ্যসচিব ব্রাসেলসে আছেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক সম্প্রসারণের বিষয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছে।
বর্তমানে ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী বলে উল্লেখ করেন পীযূষ গয়াল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভোক্তা মূল্যসূচকভিত্তিক মূল্যস্ফীতি বিগত অনেক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে। তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে লাখ লাখ নতুন ডিমান্ড হিসাব খোলা হচ্ছে এবং প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১৪ শতাংশ বেড়েছে।…কিন্তু ভারত এখন শুধু ভেতরের দিকে তাকাচ্ছে না, বাইরের দেশেও বিনিয়োগ করছে।
গয়াল বলেন, ব্যাংকিং খাত অনেক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করেছে। আজ ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সব অংশীজন নিজেদের অনেক বেশি নিরাপদ মনে করছেন। গত কয়েক বছরে ব্যাংকের শেয়ারের ঊর্ধ্বগতিতে ভালো মুনাফাও করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী—এ কথাও মনে করিয়ে দেন গয়াল।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.