উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ১

কারখানা বন্ধ ও ছাঁটাইয়ের জেরে নীলফামারীর উত্তরা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (ইপিজেড) পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় নিহত মো. হাবিব (২১) নীলফামারী সদর উপজেলার ছোট সাঙ্গোলসি গ্রামের দুলাল ইসলামের ছেলে। তিনি উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনালের কর্মী ছিলেন।

নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত হাবিব রাতের শিফট শেষে সকালে কারখানা থেকে বের হচ্ছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালালে তিনি নিহত হন।

পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, হংকংভিত্তিক পরচুলা কারখানা এভারগ্রীন (বিডি) লিমিটেড প্রায় ৫০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। এরপর থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না করেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে মূল ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে দিলে আজ পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়।

আজ সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হন এবং ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে অবস্থান নেন। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ বাধে এবং শ্রমিকরা আহত হন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, উত্তরা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কিছুই করে না, বরং কারখানা মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, এভারগ্রীন কারখানা কর্তৃপক্ষ হঠাৎই শ্রমিকদের ছাঁটাই করেছে এবং আরও অনেক শ্রমিকের নাম ছাঁটাই তালিকায় রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই চাকরির বয়স ৮-১০ বছর হলেও তাদের নিয়মমাফিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. ফারহান তানভিরুল ইসলাম জানান, আজ সকাল ৯টার দিকে মৃত অবস্থায় হাবিবকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মৃতের বুকে একটি ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে এবং প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত ৬ জন আহত শ্রমিক নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আহতদের বিষয়ে ডা তানভিরুল বলেন, তারা দাবি করেছেন যে তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এক্স-রে করার পরই তাদের আঘাতের প্রকৃতি ও কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

উত্তরা ইপিজেড এলাকায় মোতায়েনকৃত ৫৬ বিজিবি কমান্ডার স্কোয়াড্রন মো. বদরুজ্জোহা বলেন, আমরা ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।

উত্তরা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক জানান, তারা কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.