আফগানিস্তানে ভূমিকম্প, তীব্র ত্রাণ সংকট

আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮০০ জনের বেশি মানুষ। দুর্গম ও পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে, আর আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আসাদাবাদ এলাকার একটি প্রাদেশিক হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, “হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। আমাদের তাঁবু দরকার। আমাদের ওষুধ দরকার। রেড ক্রস সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু আমাদের আরও সাহায্যের প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, তার ছোট হাসপাতালেই ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তেমন সহায়তা পৌঁছেনি বলে দাবি করেন তিনি।

চিকিৎসকটির মতে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তালেবানের সঙ্গে মতপার্থক্য দূরে রেখে আফগানদের সাহায্য পাঠানো।”

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার গভীর রাতে ছয় মাত্রার এই ভূমিকম্পে কুনারসহ আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুনার প্রদেশ অত্যন্ত রক্ষণশীল হওয়ায় নারী ও শিশুদের চিকিৎসা প্রাপ্তিতে সাংস্কৃতিক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তালেবানি নীতিমালার কারণে নারীদের চিকিৎসা, চলাফেরা বা সেবার জন্য একজন পুরুষ অভিভাবক থাকা বাধ্যতামূলক।

ফ্রিল্যান্স এক সাংবাদিক জানান, জালালাবাদের প্রধান হাসপাতালে কিছু নারী চিকিৎসা পেলেও, পুরুষ রোগীর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

মানবিক সংস্থা কেয়ারের প্রতিনিধি দীপমালা মাহলা বলেন, “নারী ও মেয়েরা এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে।” তিনি নারী মানবিক কর্মীর গুরুত্ব তুলে ধরেন যাঁরা সরাসরি নারী ও শিশুদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে পারেন।

চীন, ভারত, সুইজারল্যান্ডসহ একাধিক দেশ ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জাতিসংঘ তাদের বৈশ্বিক জরুরি তহবিল থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ছাড় করেছে।

যুক্তরাজ্য আফগান ভূমিকম্প দুর্গতদের জন্য এক মিলিয়ন পাউন্ডের জরুরি তহবিল বরাদ্দ করেছে, যা সরাসরি তালেবান প্রশাসনের কাছে না গিয়ে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA), আন্তর্জাতিক রেড ক্রস (IRFC) এবং অন্যান্য অংশীদারদের মাধ্যমে বিতরণ হবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “এই সহায়তার মাধ্যমে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিশ্চিত করা হবে।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানান, কাবুলে এক হাজার তাঁবু এবং কুনারে ১৫ টন খাদ্য সহায়তা পৌঁছেছে। আরও ত্রাণ পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

জাতিসংঘের ওসিএইচএ প্রধান অ্যামি মার্টিন বলেন, “আবাসন, আশ্রয় এবং কম্বল সবচেয়ে জরুরি। আমরা যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।”

উদ্ধারকারীরা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি খাবার, উচ্চ-শক্তিসম্পন্ন বিস্কুট ও গরম খাবার সরবরাহ শুরু হয়েছে।

তবে চিকিৎসা, আশ্রয় ও ত্রাণ সরবরাহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও জোরালো করা না হলে, এই মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.