শুল্কচাপে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা, নতুন গন্তব্য আমিরাত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করার পরপরই ভারতের ব্যবসায়ীরা নড়েচড়ে বসতে শুরু করেন। এরপর রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা গতকাল বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরা আরও তৎপর হয়ে উঠেছেন।

ব্যবসা স্থাপন ও সহায়তাসংক্রান্ত পরামর্শক সংস্থাগুলো বলছে, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর ভারতের ব্যবসায়ীদের পরামর্শ নেওয়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) গালফ নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক (ইউএই) একটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) মতে, ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, এটা তাঁর কৌশল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক আসার পরই তাঁরা মনে করতে শুরু করেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে চুক্তি হবে না। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিকারক অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী এখন নিজ দেশ থেকে কারখানা সরাতে চান। তাঁরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌথ উদ্যোগ বা বিনিয়োগের কথা ভাবছেন।

একই ধরনের আলোচনা শোনা যাচ্ছে আরব আমিরাতের গয়নাশিল্পেও। বেশ কয়েকটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এখন আরব আমিরাতে গয়নার ডিজাইন ও উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করতে চাইছে। ভারত থেকে সরাসরি রপ্তানি করলে যে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, তা এড়াতে এই উদ্যোগ। ৫০ শতাংশ শুল্ক স্থায়ী হলে ভারতের গয়না রপ্তানিকারকেরা বড় ধাক্কা খাবেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পৌঁছানোর খরচ এত বাড়বে যে তাঁরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারবেন না।

দুবাইভিত্তিক গয়না ব্যবসায়ী আনাইল ধানক সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, মার্কিন শুল্ক সম্পর্কে ধৈর্য ধরতে হবে। দেখা গেছে, ট্রাম্প ক্ষণে ক্ষণে সিদ্ধান্ত পাল্টান। ফলে আগামী এক মাসে শুল্কহারে পরিবর্তন আসবে কি না, তা এখন দেখার অপেক্ষা।

আনাইল ধানক আরও বলেন, ‘আমরা যৌথ উদ্যোগের দিকে তাকাচ্ছি না। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে স্বর্ণের দাম অনেক বেশি, খরচ মেটাতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে, নতুন কোনো অঙ্গীকার চাই না।’

ট্রাম্প প্রশাসন সব ভারতীয় পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেনি। ভারতের ওষুধ ও প্রযুক্তিপণ্য শুল্কের আওতার বাইরে। যেমন অ্যাপল যদি ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাতে শুল্ক দিতে হবে না।

ভারতীয় গয়না ব্যবসায়ীরা মার্কিন বাজারের জন্য উৎপাদন আরব আমিরাতে সরিয়ে নিলে রপ্তানি শুল্ক হবে মাত্র ১০ শতাংশ, ৫০ শতাংশ নয়। এর শর্ত হলো, উৎপাদন ও মূল্য সংযোজন সে দেশেই হতে হবে, ভারতে নয়। বারজিল জিওজিৎ ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সিইও কৃষ্ণন রামচন্দ্রন এ কথা বলেন।

পরামর্শক সংস্থা সোভারিন গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবসা উন্নয়ন ব্যবস্থাপক অক্সানা সুখার বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরব আমিরাতে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সব সময় আগ্রহী।

অক্সানা সুখার আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা ভারতীয় কোম্পানিগুলো এখন পুনর্বিবেচনা করছে, কোথায় উৎপাদন ও রপ্তানি করা সবচেয়ে লাভজনক, বিশেষ করে যদি তাদের মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র হয়। সে ক্ষেত্রে আরব আমিরাত শক্তিশালী বিকল্প কেন্দ্র।

এদিকে আরব আমিরাতে ভারতের কিছু ব্যবসা আগে থেকেই আছে, বিশেষ করে বস্ত্র ও পোশাক, ধাতু ও যান্ত্রিক পণ্য, রসায়ন, ওষুধ ও আইটি সেবা খাত উল্লেখযোগ্য। এমসিএ গালফের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ভেঙ্কটেশ সান্তনাম এ কথা বলেন।

ভেঙ্কটেশ বলেন, এরা ইতিমধ্যেই এমন অবস্থানে আছে, যেখানে তাদের পক্ষে নতুন নীতি ও শুল্কের সুবিধা নেওয়া সম্ভব হবে।

ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন চীনারা

২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে চীনা উৎপাদকেরা মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বিকল্প উপায় খোঁজেন। বিবিসির তথ্যানুসারে, তখন ভিয়েতনাম ছিল চীনের অন্যতম লক্ষ্য। কেননা, সেখানে শ্রম খরচ কম, কিন্তু রপ্তানি সুবিধা বেশি। এ ছাড়া চীন-ভিয়েতনাম সম্পর্কের কারণে সরবরাহব্যবস্থাও ছিল সহজ। এ কারণে ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ অনেকটাই বেড়ে যায়।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.