বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নগদবিহীন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা মানুষের জন্য আয় সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, নগদবিহীন অর্থনীতি (ক্যাশলেস ইকোনমি) যেন আয়বিহীন অর্থনীতিতে (ইনকামলেস ইকোনমি) পরিণত না হয়।
সোমবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট ২০২৫’-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এই মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস (আইসিএমএবি) ও মাস্টারকার্ড।
প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে কেবল প্রযুক্তিগত নয়, একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য একটি সমন্বিত কৌশল নেওয়া প্রয়োজন।
তিনি জানান, দেশে এখনো প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ নগদ অর্থ লেনদেনের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ডিজিটাল লেনদেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি না ঘটলে ক্যাশলেস ইকোনমির সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
নগদবিহীন অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি কেনাকাটা আইন সংশোধন, রাজস্বনীতিতে পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন ও ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে ৭৫ শতাংশ লেনদেন ডিজিটালি করার লক্ষ্য নিয়েছে। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে নীতি সহজ করা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো, অবকাঠামো দুর্বলতাসহ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করতে হবে।
তিনি বলেন, সার্বিক লেনদেন ব্যবস্থা (পেমেন্ট ইকোসিস্টেম) বহুমুখী করতে হবে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে (এমএফএস) নগদ জমা ও উত্তোলনের বাইরে বিস্তৃত করতে হবে, যেন এগুলো রাস্তাঘাটের দোকানসহ বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক খাতেও ব্যবহৃত হয়। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক, টেলিকম ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক নগদবিহীন অর্থনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব।
এই লক্ষ্যে তিনি তিনটি সুপারিশ করেন- নগদবিহীন অর্থনীতি নিয়ে দেওয়া পরামর্শগুলো সমন্বিত করে একটি কাঠামোবদ্ধ প্রস্তাবনা তৈরি করা। পরিকল্পনা কমিশনকে এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা নেওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে অগ্রগতি তদারক ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.