ট্রাম্পের ঘোষণায় ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ, প্রভাব পড়েছে ডলারের বাজারে

আজ সকালে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ পদক্ষেপে ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় ডলারের দুর্বলতা বেড়েছে।

সোমবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি ফেড গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্ত করবেন। অভিযোগ, বন্ধকি সম্পত্তির চুক্তি জালিয়াতি। তবে কুকের আইনজীবী জানিয়েছেন, বরখাস্ত ঠেকাতে তিনি মামলা করবেন। এতে দীর্ঘ আইনি লড়াই হবে বলেই আভাস মিলেছে।

ট্রাম্প ফেডের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন—এমন ধারণা থেকে ট্রাম্পের প্রতি আস্থা কমেছে বিনিয়োগকারীদের। এশিয়ার বাজারে বুধবার লেনদেন তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও ডলার প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রার বিপরীতে আগের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেনি। সর্বশেষ ১ ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ১৪৭ দশমিক ৫২ ইয়েন। ইউরো স্থিতিশীল ছিল ১ দশমিক ১৬৩৮ ডলারে আর পাউন্ড দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩৪৭৮ ডলারে। প্রধান মুদ্রার বিপরীতে ডলার সূচক সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯৮ দশমিক ২৭ হয়েছে; আগের দিন যা শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছিল।

যুক্তরাজ্যের স্যাক্সো ব্যাংকের বিনিয়োগ কৌশলবিদ নিল উইলসন বলেন, ফেডকে ঘিরে নতুন লড়াই শুরু হলো এর মধ্য দিয়ে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ে যে রাজনৈতিকীকরণ শুরু হয়েছে, তা আরও ঘনীভূত হবে। আগামী দিনে ফেড চেয়ারের জন্য ট্রাম্পের বাইরে গিয়ে কিছু করা কার্যত অসম্ভব হবে। বিষয়টি ডলারের জন্য নেতিবাচক সংকেত। বাজার এখন সেপ্টেম্বরে ফেড বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে; কিন্তু তার আগে বাজার নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন বলে মনে করেন তিনি।

ডলার দুর্বল হওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ হলো সেপ্টেম্বরে নীতি সুদ কমানোর সম্ভাবনা। বিশেষ করে কুককে সরিয়ে দিলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত যিনি হবেন, তিনি যদি শিথিল নীতির পক্ষপাতী হন, তাহলে এ প্রত্যাশা আরও জোরদার হবে।

ট্রাম্প এর আগেও বারবার সুদ কমানোর দাবি তুলেছেন এবং ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরানোর হুমকি দিয়েছেন, যদিও সম্প্রতি সে অবস্থান থেকে তিনি সরে এসেছেন। কুককে সরানো গেলে ট্রাম্প ফেড বোর্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ট্রাম্পের দিকে হেলে যাবে। এর মধ্যে দুজন আগে থেকেই দায়িত্বে আছেন। অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের অর্থনীতিবিদ স্টিফেন মিরানের মনোনয়ন ঝুলে আছে।

হ্যারিস ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের অংশীদার জেমি কক্স বলেন, ট্রাম্প কার্যত ফেডের নীতি-সংকেত দেওয়ার ক্ষমতা দখল করেছেন। বাজারকে সরাসরি জানাচ্ছেন সুদহার কমছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বন্ডের সুদহারে।

দুই বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বুধবার ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশে নেমে আসে, যা গত ১ মে-পরবর্তী সময়ে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদহার বেড়েছে। কেননা শিগগিরই আর্থিক নীতি শিথিল হলে পরবর্তীকালে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার সর্বশেষ সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অন্যান্য মুদ্রার মধ্যে অস্ট্রেলীয় ডলারের মান দাঁড়িয়েছে শূন্য দশশিক ৬৪৯৫ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া কিউই ডলার সামান্য কমে নেমেছে শূন্য দশমিক ৫৮৫৬ ডলারে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.