ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের চলমান ধরপাকড়ের সমালোচনা করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন দেশটির পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী সৈয়দা সাইয়্যেদিন হামিদ। সম্প্রতি আসাম সফরে গিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশিরাও মানুষ এবং তাদের ভারতের মাটিতে বসবাসের অধিকার আছে।”
তার এই মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এক্সে দেওয়া পোস্টে সৈয়দা হামিদের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য ভারতের সার্বভৌমত্ব ও পরিচয়কে দুর্বল করে। মানবতার নামে বিভ্রান্তিকর কথা বলা হচ্ছে।”
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, বিভিন্ন রাজনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও হামিদের বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর হন। শর্মা বলেন, “এটা অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে দুর্বল করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। আমরা সতর্ক ও অটল আছি; কোনও অপপ্রচার আমাদের ভূমি ও সংস্কৃতি রক্ষার লড়াই থেকে বিরত রাখতে পারবে না।”
উল্লেখ্য, ইউপিএ সরকারের আমলে সৈয়দা হামিদ ছিলেন ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য। আসাম সফরকালে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “তারা যদি বাংলাদেশি হয় তাতে দোষ কোথায়? বাংলাদেশিরাও তো মানুষ। পৃথিবী এত বড়, তারা এখানে থাকতে পারেন। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ এই পৃথিবী মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, শয়তানদের জন্য নয়। একজন মানুষ যদি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাকে উৎখাত করা মুসলমানদের কাছে কিয়ামতের মতো। আসাম সরকার মুসলমানদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।”
অন্যদিকে কিরেন রিজিজু ও মুখ্যমন্ত্রী শর্মা উভয়েই সতর্ক করে দেন, এসব বক্তব্য “জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত সুরক্ষার প্রতি হুমকি” এবং “আসামে বৈধ উচ্ছেদ অভিযানকে মানবিক সংকট হিসেবে চিত্রিত করার ষড়যন্ত্র”।
রিজিজু বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সংখ্যালঘু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু ও শিখদের ওপর কেন নির্যাতন হয়, তা কেউ বলেন না। কিন্তু ভারতের ভূমিতে অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, হামিদ সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হলেও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া অনুচিত।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আরও বলেন, “দিল্লিভিত্তিক একটি দল আসামে ক্যাম্প করছে যারা বৈধ উচ্ছেদ অভিযানকে মানবিক সংকট হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে। এই দলে রয়েছেন হর্ষ মন্দার, ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ, ফায়াজ শাহিন, প্রশান্ত ভূষণ ও জওহর সিরকার।”
তিনি এ প্রচেষ্টাকে “উত্তেজনা ছড়ানোর এবং আসামের ভূমি রক্ষা লড়াই দুর্বল করার ষড়যন্ত্র” হিসেবে আখ্যা দেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.