পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। একইসঙ্গে দেড় দশক ধরে অকার্যকর থাকা বাংলাদেশ-পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর করার কথাও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সচিবালয়ে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে ১৫ বিলিয়ন ডলার খাদ্য ও মধ্যবর্তী পণ্য। এই পণ্য বাণিজ্য আরও বাড়াতে নতুন কমিশন গঠন করা হচ্ছে।
বৈঠকে কৃষি, খাদ্যপণ্য ও ফল আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে আলোচনা হয়। স্থানীয়ভাবে চিনি উৎপাদনে পাকিস্তানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে এবং মধ্যবর্তী পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ আহ্বান জানানো হয়েছে। পাকিস্তান এসব প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।
বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ওপর পাকিস্তানের অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে, যা প্রত্যাহারে তারা আশ্বাস দিয়েছে। চামড়া ও চিনিশিল্প উন্নয়নে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
বশিরউদ্দীন বলেন, পাকিস্তান এক সময় ১ কোটি কেজি চা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করত, সেটি আবার চালুর অনুরোধ জানানো হয়েছে, যা তারা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বৈরিতা বাড়বে কিনা— এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার কাজ বাণিজ্যে সক্ষমতা তৈরি করা। দেশের স্বার্থ যেখানে আছে, আমরা সেদিকেই ঝুঁকছি।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাওনা বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি বাণিজ্যের আওতাভুক্ত নয় এবং এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবর রহমান বলেন, গত অর্থবছর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ৭৮৭ মিলিয়ন ডলার পণ্য আমদানি করেছে এবং রপ্তানি করেছে ৭৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। খাদ্য, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য প্রতিযোগিতামূলক দামে পাকিস্তান থেকে আমদানি করলে তা সাশ্রয়ী হবে, এবং রপ্তানি বাড়ানোতেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের সঙ্গে দেখা করেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এখন করাচি বন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আসছে, যা সময় ও খরচ সাশ্রয় করছে। আগে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে এসব পণ্য আনতে হত।
শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাতে শিল্প উন্নয়ন, বিএসটিআই ও পাকিস্তানের হালাল অথরিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের বিষয়েও আলোচনা হয়।
পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি ও জীবনাচারে মিল রয়েছে। টেক্সটাইল ও জুয়েলারি পণ্য এদেশে জনপ্রিয়। বিমান ও কার্গো যোগাযোগ বাড়ালে বাণিজ্য বাড়বে।
জাম কামাল খান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল, তাই পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি। ইউরোপ, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্ব্যবহৃত পোশাকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে— যেখানে দুই দেশের উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সিমেন্ট, চিনি, পাদুকা ও চামড়া খাতে ভালো করছে— বাংলাদেশ চাইলে এসব পণ্য আমদানি করতে পারে। বাংলাদেশের ওষুধ খাতে অভিজ্ঞতা পাকিস্তানের জন্য উপকারী হবে।
পাকিস্তানের পণ্য প্রচারে বাংলাদেশে সিঙ্গেল কান্ট্রি এক্সিবিশন আয়োজনে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই সফরে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। জাম কামাল খান সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ছাড়াও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, চট্টগ্রাম বন্দর, একটি ওষুধশিল্প প্রতিষ্ঠান ও একটি ইস্পাত কারখানা পরিদর্শন করবেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.