মানবিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত সংগঠনগুলো গ্র্যান্ড ব্যার্গেন প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশীয় পর্যায়ে একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরির দাবি জানিয়েছেন, যেখানে মানবিক সহায়তা প্রদানের স্থানীয়করণ, গুণগত তহবিল প্রদান এবং দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের প্রতি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। গ্র্যান্ড বার্গেইন প্রতিশ্রুতিগুলো ২০১৬ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলে বিশ্ব মানবিক সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল। বর্তমানে এর স্বাক্ষরকারী হলো ৭০টি দাতা দেশ ও মানবিক তহবিল প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার (১৯ মঙ্গলবার) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
দেশীয় পর্যায়ে গ্র্যান্ড বার্গেইনের প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোর সমন্বয় করে একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বক্তারা কিছু আইএনজিও শাখার দেশীয় পর্যায়ে নিবন্ধন গ্রহণ এবং তাদেরকে স্থানীয় এনজিও হিসাবে দাবি করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যা গ্র্যান্ড বার্গেইন স্থানীয়করণ প্রতিশ্রুতির চেতনার পরিপন্থী বলে তারা মত দেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন, বিডিসিএসও প্রসেস এবং কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরামের আয়োজনে আজ এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এক্সেলারেটিং গ্রান্ড বার্গেইন ৩.০ ফর অ্যাডভান্সিং হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ইন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোঃ ইকবাল উদ্দিন।
আলোচনায় বিশিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের সুইডেন দূতাবাসের প্রথম সচিব মাতিলদা সভেনসন; মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম; সুইজারল্যান্ডের গ্র্যান্ড বার্গেইন সচিবালয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা বিওন হফম্যান; ডিজাস্টার ফোরামের গওহের নঈম ওয়ারহা; ভারতের হিউম্যানিটারিয়ান এইড ইন্টারন্যাশনাল থেকে সুধাংসু শেখর সিং; এনআরডিএস থেকে আব্দুল আউয়াল; ওয়াটার কিপারস্ বাংলাদেশ থেকে শরীফ জামিল; ক্রিশ্চিয়ান এইডের নুঝাত জেবিন; এডাবের জসিম উদ্দীন; ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে নাসির উদ্দীন; আইএফআরসি থেকে মেহেদি হাসান শিশির এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ থেকে দুলন যোশেফ গোমেজ।
মূল প্রবন্ধে মোঃ ইকবাল উদ্দিন বলেন, গ্র্যান্ড বার্গেইন ৩.০ এর মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সে তুলনায় অগ্রগতি সামান্যই। তাই দাতা দেশ ও সাহায্য সংস্থাগুলোর গ্র্যান্ড বার্গেইন প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে স্থানীয়করণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য স্থানীয় সংগঠনগুলোকে সরাসরি কমপক্ষে ২৫% তহবিল প্রদান, বহুবর্ষী তহবিল প্রদান, যৌথ জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের জন্য পরিকল্পনা তৈরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাতিলদা সভেনসন বলেন, দাতা দেশ হিসেবে সুইডেন ও সিডা সরাসরি স্থানীয় সংগঠনগুলোকে গ্র্যান্ড বার্গেইন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৫ শতাংশ তহবিল প্রদান নিশ্চিত করেছে। তিনি গ্র্যান্ড বার্গেইনের অন্যান্য স্বাক্ষরকারীদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সম-অংশীদারিত্বের উপর তিনি জোর দেন।
শাহীন আনাম বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দাতা ও অংশীদারি সংগঠন দাতাদের উপরও বর্তায়। তিনি স্বচ্ছতার সাথে দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের কাছে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিওন হফম্যান বলেন, গ্র্যান্ড বার্গেইন সচিবালয় থেকে থিংক পিস প্রতিবেদনটি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে গ্র্যান্ড বার্গেইন প্রতিশ্রুতিগুলোর অগ্রগতি সবাইকে জানানো হবে।
গওহের নঈম ওয়ারহা বলেন, স্থানীয়করণ মানে শুধু তহবিল সহায়তার স্থানীয়করণকেই বোঝায় না, স্থানীয় সম্পদের স্থানীয়করণ বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। সুধাংসু শেখর সিং আলনাপের গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় সংগঠনগুলোকে দাতারা সরাসরি মাত্র ০.৬% তহবিল প্রদান করে। এটি দুঃখজনক এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোকে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তিনি আরো সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান। আব্দুল আউয়াল বলেন, ইউএসএআইডির তহবিল কমে যাওয়ার কারণে স্থানীয় সংগঠনগুলো সংকটের মধ্যে রয়েছে। সংকট আরো আসবে, সেজন্য এনজিওগুলোকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের আব্দুল্লাহ আল নোমান; মুসলিম এইডের ড. ফাদিয়া সুলতানা; বিএনএনআরসির এ এইচ এম বজলুর রহমান; অগ্রযাত্রা বাংলাদেশ থেকে নিলীমা আক্তার চৌধুরী; সিদিপ থেকে মিফতা নাঈম হুদা; হিউম্যানিটারিয়ান এক্সপার্ট আব্দুল হালিম প্রমুখ।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.