পরিবেশবান্ধব নীতির মাধ্যমে ১ লাখ কর্মসংস্থানের দ্বার খুলছে জাহাজশিল্প

বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হলে বাংলাদেশের জাহাজশিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে। একইসঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ও সঠিক কর্মপরিবেশ। এই শিল্পে অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন নগদ সহায়তা, শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ, পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পের বিকাশ, স্বল্প সুদে ঋণ, মূলধন সরবরাহ এবং উৎপাদনে বৈচিত্র্য। এসব পদক্ষেপ কার্যকর করা গেলে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে জাহাজ রপ্তানি শিল্প এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হতে পারে। পাশাপাশি এক লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

‘পরিবেশবান্ধব জাহাজ নির্মাণ ও শিল্পায়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ জাইদি সাত্তার। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)-এর সভাপতি লুতফুন নিসা সৌদীয়া খান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

মূল প্রবন্ধে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার জানান, বড় জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশ এখনো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে। এই বাজারে চীন, কোরিয়া ও জাপানের আধিপত্য রয়েছে। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজ তৈরিতে দেশের সম্ভাবনা বিশাল। ১২ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস শিপ, ফিডার ভেসেল এবং ফেরির বৈশ্বিক বাজার প্রায় ১১৫ বিলিয়ন ডলারের। ২০২৭ সালের মধ্যে এই বাজারের মাত্র ১ শতাংশ দখল করতে পারলেও বাংলাদেশ এ খাত থেকে বছরে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে দেশের বার্ষিক নির্মাণক্ষমতা প্রায় ২০টি জাহাজ।

জাইদি সাত্তার বলেন, ‘বিশ্বের ৮০ শতাংশ বাণিজ্যই সমুদ্রপথে হয়ে থাকে। ফলে বিশ্ববাণিজ্যের ঊর্ধ্বগতি জাহাজ নির্মাণের চাহিদাও বাড়ায়। শ্রমঘন ও সম্ভাবনাময় এ খাতে উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে পারলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। বর্তমানে আমরা একটি ঊর্ধ্বমুখী চক্রে রয়েছি, তাই এই সময়টিকে কাজে লাগানো জরুরি।’

সেমিনারে বক্তব্যে আদিলুর রহমান খান বলেন, বিশ্ব আজ পরিবেশবান্ধব জাহাজের দিকে ঝুঁকছে। যে দেশ পরিবেশবান্ধব জাহাজ তৈরিতে সক্ষম হবে, সামুদ্রিক অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে সেই দেশই। গ্রিন সনদ, নবায়নযোগ্য শক্তি ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জাহাজ নির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয় ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রযুক্তি আসে এবং আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছি। সেক্ষেত্রে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ এখন সময়ের দাবি। জাহাজভাঙা শিল্পে কিছু ঝুঁকি থাকলেও ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এই শিল্পে অনিশ্চয়তা দূর করতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে কাউন্টার রিফান্ড গ্যারান্টি ও বিমা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

আইবিএফবির সভাপতি লুতফুন নিসা সৌদীয়া খান জানান, দেশের নির্মিত ৫০টির বেশি জাহাজ বর্তমানে ১৮টি দেশের বাণিজ্যে যুক্ত। এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তবে উন্নয়নের জন্য ৫০ লাখ ডলারের তহবিল দরকার এবং রপ্তানিতে প্রণোদনা বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করতে হবে।

সেমিনারে আইবিএফবির পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই শিল্পে বাংলাদেশ ভারতের মতো প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তাই কৌশলগত নীতি ও ব্যাংক সহযোগিতা এখন জরুরি।

অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন রশিদ ও প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.