বাংলাদেশের ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণার পর ভারতের চালবাজারে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে দেশটিতে চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাংলাদেশে চাল রপ্তানির তোড়জোড়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, ও সরবরাহে সাময়িক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিকস টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, ও দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সাময়িকভাবে চাল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক তুলে নেবে—এমন তথ্য আগে থেকেই তাঁদের কাছে ছিল। এজন্য পেট্রাপোল সীমান্তের গুদামে চাল প্রস্তুত রেখেছিলেন তাঁরা।
বাংলাদেশ সরকার বুধবার চাল আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে চাল রপ্তানিতে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
ঘোষণার পর ভারতের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপি হয়েছে। মিনিকেট চালের দাম ৪৯ রুপি থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না চাল ৩৬-৩৭ রুপি থেকে বেড়ে ৪১-৪২ রুপি, এবং সোনা মসুরি চালের দাম ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি হয়েছে।
এক রপ্তানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমদানির শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পরদিন রাত থেকেই ভারত থেকে চালবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, পরিবহন ও খরচ বিবেচনায় পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানি সুবিধাজনক। এজন্য উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের কারখানাগুলো এই পথেই রপ্তানি করছে।
ভারতের বাজারে স্বর্ণা চালের চাহিদা দেশজুড়ে থাকলেও, মিনিকেট চাল বেশি জনপ্রিয় পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে। রত্না চাল বেশি খাওয়া হয় উত্তর ভারতে, এবং সোনা মসুরি চাল দক্ষিণ ভারতের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখা, এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিশুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে, এবং ওই সময়ে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছে।
আন্ধ্রপ্রদেশের এক চালকল মালিক জানিয়েছেন, তাঁর ট্রাকগুলো বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
এক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ বেশি, এবং ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মজুত ভালো অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের এই আমদানি চাহিদা ভারতের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এবং বৈশ্বিক দরপতন সামলাতে সহায়ক হবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.