ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য চিঠি দেব: ড. ইউনূস

২০২৬ সালের রমজানের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা জানান তিনি। ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করবো। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবো।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাবো, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন যেন সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সব নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করবো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসবের দিক থেকে, শান্তি-শৃঙ্খলার দিক থেকে, ভোটার উপস্থিতির দিক থেকে, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে সেজন্য সব আয়োজন শেষ করতে আগামীকাল থেকে আমরা সবাই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করবো।

এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তিনি। এ ছাড়া, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

২৮ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে। দেশের জনগণ ‘যুক্তিসঙ্গত সময়ে’ অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে বলে ঘোষণাপত্রে বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী। সেই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনটি বাংলাদেশ উদযাপন করছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ অগাস্ট দায়িত্ব নিয়েছিল মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারও এক বছর পূর্ণ করতে চলেছে।

এর মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে নেওয়া উদ্যোগ গুছিয়ে এনেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা শিগগিরই ভোটের সম্ভাব্য সময়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন বলে গত সপ্তাহে আভাস দিয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথমে বলেছিলেন নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে। পরবর্তী সময়ে লন্ডনে বলা হয়েছে যদি অনেকগুলো সংস্কার হয় এবং বিচারের কাজগুলো এগিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে…সনদ বা ঘোষণাপত্র যাই হোক না কেন, যেভাবেই সনদ গ্রহণ করা হোক না কেন- নির্বাচন তার সময়মতো হয়ে যাবে।

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি শেষে আগামী রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও তফসিলের দাবি জানিয়ে আসছে।

প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শেষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর সরকারপ্রধানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করার পর সিইসি নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘ফুল গিয়ারে’ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.