সরকার রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য আলাদা দুটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ দুটি নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে।
উভয় নীতিমালাতেই বলা হয়েছে, পদোন্নতির জন্য কোনো ধরনের তদবির বা সুপারিশকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রথমবারের মতো এমন ধারা নীতিমালায় যুক্ত করা হলো।
একটি নীতিমালা করা হয়েছে ছয়টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী, জনতা, রূপালী, অগ্রণী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি (বিডিবিএল)। আরেকটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে ছয়টি বিশেষায়িত ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য। এগুলো হলো: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন।
এ নীতিমালা সিনিয়র অফিসার থেকে প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও), সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য প্রযোজ্য হবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সন্তোষজনক চাকরির রেকর্ড, মেধা, কর্মদক্ষতা, প্রশিক্ষণ, সততা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে স্নাতক ডিগ্রির নিচে কেউ পদোন্নতির যোগ্য হবেন না।
বাণিজ্যিক ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর এবং বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩০ জুন ফিডার পদের চাকরিকালের ভিত্তিকাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কর্মচারীর সর্বশেষ তিন বছরের যেকোনো বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য থাকলে তিনি পদোন্নতির যোগ্য হবেন না। ফৌজদারি মামলা চলমান থাকলে বা দণ্ডপ্রাপ্ত হলে, বিভাগীয় মামলায় দণ্ডিত হলে অথবা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযোগপত্র দিলে বা গ্রেপ্তার হলে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি মিলবে না। লঘুদণ্ডের ক্ষেত্রে দণ্ড শেষে এক বছর এবং গুরুদণ্ডের ক্ষেত্রে দুই বছর পর বিবেচনা করা যাবে।
পদোন্নতির জন্য ১০০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের গড় এসিআর নম্বর ৪৫, শিক্ষাগত যোগ্যতা ১৫, ফিডার পদে চাকরিকাল ১৫, মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা ৪, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ১০, দুর্গম এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা ১, শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে অর্জন ২ এবং মৌখিক পরীক্ষা ৮ নম্বর। মৌখিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪। লিখিত অংশের মধ্যে প্রার্থীকে কমপক্ষে ৭৫ পেতে হবে।
পূর্ব প্রস্তাবে আইসিএবি বা আইসিএমএবি ডিগ্রির জন্য ১ নম্বর রাখার কথা থাকলেও তা বাদ দিয়ে চাকরিকালের নম্বরের সঙ্গে এক নম্বর যুক্ত করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৪।
সাক্ষাৎকারে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কারণ না থাকলে পদোন্নতির বিবেচনায় রাখা হবে না। তবে বৈধ কারণ থাকলে পরবর্তীতে সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে। পদোন্নতি পাওয়া সত্ত্বেও কেউ যোগ না দিলে তা কার্যকর হবে না। কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ব্যাখ্যাই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
ডিজিএম পদে পদোন্নতির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এজিএম পদে সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। সিনিয়র অফিসার থেকে ডিজিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির জন্য বাছাই কমিটি গঠন করবেন এমডি।
বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমডি সভাপতি এবং ডিএমডি (প্রশাসন) সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। প্রয়োজন হলে একাধিক বাছাই কমিটি করা যাবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.