ভারতের প্রভাবশালী আদিবাসী নেতা শিবু সোরেনের মৃত্যু

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী আদিবাসী নেতা ও তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবু সোরেন আর নেই। সোমবার (৫ আগস্ট) দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮১ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এবং গত মাসে স্ট্রোকের পর থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

চার দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় থাকা শিবু সোরেন ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)–র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিহারের দক্ষিণ অংশকে আদিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ আলাদা রাজ্যে রূপান্তরের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ২০০০ সালে ঝাড়খণ্ড পৃথক রাজ্য ঘোষিত হলে, তিনি হন রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র।

তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংকটে কোনো মেয়াদই শেষ করতে পারেননি তিনি।

বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছেলে হেমন্ত সোরেন। বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে তিনি এক্সে লিখেছেন, আমাদের সম্মানিত ‘দিশোম গুরু’ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, এখন আমার কাছে আর কিছুই নেই। ‘দিশোম গুরু’ (সানথালি ভাষায় ‘জনগণের মহান নেতা’) উপাধিতে তিনি আদিবাসী সমাজে সমানভাবে শ্রদ্ধেয় ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক শোকবার্তায় বলেন, “তাকে একজন জনগণের নেতা হিসেবে মনে রাখা হবে, যিনি অটুট নিষ্ঠার সঙ্গে জনগণের জন্য কাজ করেছেন।”

কংগ্রেস নেতা জাইরাম রামেশ বলেন, “তিনি ছিলেন ঝাড়খণ্ড রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনের মূল ব্যক্তি। একজন কিংবদন্তি।”

শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, “ঝাড়খণ্ডের মানুষের কাছে তিনি ঈশ্বরের মতো ছিলেন।”

লালু প্রসাদ যাদব মন্তব্য করেন, “তিনি আদিবাসী ও দলিতদের অধিকার রক্ষায় সংগ্রামী নেতা ছিলেন।”

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জেএমএম–এর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন। ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের কয়লা মন্ত্রী হলেও একটি হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে পদত্যাগ করেন। পরে জামিন পেয়ে আবার মন্ত্রিসভায় ফেরেন। ২০১৮ সালে তিনি ওই মামলায় অবশেষে খালাস পান।

২০০৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন, কিন্তু মাত্র ১০ দিনের মাথায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করতে হয়।

শিবু সোরেনের মৃত্যু শুধু একজন রাজনীতিকের মৃত্যু নয়—এটি আদিবাসী রাজনীতির এক অধ্যায়ের সমাপ্তি। তার রাজনীতি ছিল স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মানচিত্রে তার নাম অমলিন থাকবে বহুদিন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.