যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও রাশিয়ার তেল কেনায় অনড় ভারত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক–খড়্গ এবং কূটনৈতিক চাপের মুখেও রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার বিষয়ে এখনও নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও নিষেধাজ্ঞার আবহে দেশবাসীকে স্থানীয় পণ্য ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন—ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থই সবার আগে।

সোমবার (৪ আগস্ট) ব্লুমবার্গ ও ইকোনমিক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ব্লুমবার্গ ও ইকোনমিক টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, মোদি সরকার দেশটির সরকারি ও বেসরকারি তেল শোধনাগারগুলোকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। বরং, বাণিজ্যিক বিবেচনায় যার যেখান থেকে সুবিধা, সেখান থেকেই তেল কিনতে অনুমোদন রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় মোদি গত সপ্তাহে উত্তর প্রদেশে এক জনসভায় বলেন, “বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, এখন আমাদের একটাই নীতি—যা ভারতীয়, তাই আমাদের প্রাধান্য।”

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ বাড়াতে গিয়ে ট্রাম্প এবার ভারতের কড়া সমালোচনায় নেমেছেন। তাঁর ভাষ্য, “ভারত ব্রিকস জোটে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, তারা চাইলে একসঙ্গে নিজেদের মৃত অর্থনীতি ডুবিয়ে দিতে পারে।”

ট্রাম্পের এই অবস্থান ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের কৌশলগত ভারসাম্য থেকে নাটকীয় সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনা প্রভাব ঠেকাতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দিয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে উপেক্ষা করেই। কিন্তু এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে না পারায় সেই নীতি পুনর্বিবেচনার দিকে ঝুঁকেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার ভারতের বিরুদ্ধে মার্কিন পণ্যে ‘বিপুল শুল্ক’ আরোপ ও অভিবাসন ব্যবস্থায় ‘প্রতারণা’ করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চান, তবে আমাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্প কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব পথ বিবেচনায় নিচ্ছেন।

এর মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজে বলেছেন, “আমি শুনেছি, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না”—যা তিনি একটি ‘ভালো পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, তেল শোধনাগারগুলোকে বিকল্প উৎস বিবেচনায় রাখতে বলা হলেও এটি ছিল ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঘাটতি মোকাবিলার প্রস্তুতি—না যে রাশিয়া থেকে তেল কেনা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপলার জানায়, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে ভারত রাশিয়া থেকে কিছুটা কম তেল আমদানি করেছে। তবে এটি মৌসুমি কারণেই, বর্ষায় তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় এমনটি প্রায় প্রতি বছরই হয়। বিশেষ করে সরকারি শোধনাগারগুলোর আমদানি হ্রাসটাই বেশি চোখে পড়েছে।

তেল বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সামনে এখন মূলত দুই দিক থেকে চাপ: যুক্তরাষ্ট্রের চাপ—রুশ তেল আমদানি বন্ধে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন নিষেধাজ্ঞা—যা ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হতে পারে।

এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ভারতকে হয় রুশ তেল ছাড়তে হবে, নয়তো ইউরোপীয় বাজার ছাড়তে হবে। উভয়ই ভারতের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, মোদি সরকার হয়তো আপাতত আমদানি বৈচিত্র্যের দিকে নজর দেবে, তবে রুশ তেল পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা এটি এখনও ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও খরচের দিক থেকে একটি কার্যকর উৎস।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.