বিশ্বব্যাপী ৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের হালাল অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হালাল পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায় সরকার। হালাল পণ্যের এই বিশাল বাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক নীতিমালা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা।
রবিবার (৩ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘হালাল ইকোনমি ৩৬০ : ড্রাইভিং গ্লোবাল গ্রোথ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “হালাল অর্থনীতির সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশকে হালাল পণ্যের আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর।”
সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমানে বৈশ্বিক হালাল বাজারের আকার ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, যা ২০৩৪ সালের মধ্যে ৯ দশমিক ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এ খাতে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ১২.৪২ শতাংশ। তাই মুসলিম-প্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এ খাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “বিশ্বজুড়ে অধিকাংশ হালাল পণ্য অমুসলিম দেশগুলো উৎপাদন করে। এটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলেও, সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে এটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।” তিনি আরও জানান, সরকার ইতোমধ্যে বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তা জোরদার করেছে।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সাব্বির এ খান। তিনি বলেন, “হালাল অর্থনীতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। তৈরি পোশাক খাতের বাইরে হালাল পণ্যে বাংলাদেশ একটি প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হতে পারে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, সহজতর সনদ প্রক্রিয়া এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব জোরদার হলে ২০৩০ সালের মধ্যেই শুধু মালয়েশিয়াতেই ৭-৮ বিলিয়ন ডলারের হালাল পণ্য রপ্তানি সম্ভব হবে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওসমান। তিনি বলেন, “হালাল খাতে মালয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আগ্রহী। এই অংশীদারিত্ব উভয় দেশের অর্থনীতিকে উপকৃত করবে।”
এছাড়া উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের উপদেষ্টা সৈয়দ আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক অধিবেশনে আইইউবিএটি-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোমিনুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে হালাল অর্থনীতির কাঠামো, সম্ভাবনা এবং টেকসই উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা থাকলেও, হালাল পণ্যের যৌথ উদ্যোগ এ ব্যবধান কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বক্তারা মত দেন।
অর্থসূচক/
			
						

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.