পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে। এর আওতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক কমবে এবং একই সঙ্গে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের তেলের মজুদ উন্নয়নেও সহায়তা করবে।

এক্স-এ দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছি, যার মাধ্যমে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিশাল তেলের রিজার্ভ উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই অংশীদারিত্বের নেতৃত্ব দেবে এমন একটি তেল কোম্পানিকে নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও সামাজিক মাধ্যমে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনিও বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি।

ট্রাম্প শুল্কসংক্রান্ত কোনো চুক্তির কথা উল্লেখ না করলেও পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, বাণিজ্য চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে পারস্পরিক শুল্ক হ্রাস পাবে। তবে কত শতাংশ শুল্ক কমবে, তা নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি।

চুক্তির আওতায় জ্বালানি, খনি ও খনিজ পদার্থ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও অন্যান্য খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন যুগ শুরু হবে বলে উভয় পক্ষ জানিয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর নানা হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। সে সময় পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা জানানো হয়, যা পরবর্তীতে আলোচনার জন্য ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল।

গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে দেখা করার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান একটি বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছে এবং তা কয়েক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে।

দার ও রুবিওর মধ্যে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও খনির ক্ষেত্রে বাণিজ্য এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর উভয় পক্ষই বিষয়টি নিশ্চিত করে। এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে অন্যান্য পাকিস্তানি কর্মকর্তারাও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন আলোচনার অংশ হিসেবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে ওয়াশিংটন বহু দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে। তিনি অনেক ক্ষেত্রে এসব চুক্তিকে ‘অন্যায্য’ বলে উল্লেখ করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা অনেক অর্থনীতিবিদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় জানায়, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৭.৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় (৬.৯ বিলিয়ন ডলার) বেশি। তবে একই বছরে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.২ শতাংশ বেশি।

ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে কাজ করছে। পাকিস্তানকে তারা প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র হিসেবেও মনোনীত করেছে।

ট্রাম্প আরও জানান, ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা এখনও চলছে, যদিও তিনি এর আগে জানিয়েছেন যে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর হবে।

পাকিস্তান সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্প ও রুবিওর ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ভয়াবহ হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে ৭ মে ভারত পাকিস্তানে হামলা চালায় এবং ১০ মে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.