২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ‘ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক: জুলাই ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা থাকলেও কিছু বড় চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে।
সাম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো জিইডির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে জানান হয়েছে, জুলাই মাসে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখা গেলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবিরতা, শিল্পখাতে উৎপাদন মন্দা এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের নেতিবাচকতা প্রবৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নীতি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাসে কাটছাঁট এবং বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস—এসব বিষয় বাংলাদেশের রফতানিনির্ভর অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাসে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে ২০২৬ অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ১ থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা। তবে এই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারে এখনই অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকায় মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে। তবে চালের দাম বাড়ছে, যার পেছনে রয়েছে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, পরিবহন সংকট এবং ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট তৈরির প্রবণতা।
অন্যদিকে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সামান্য বৃদ্ধি এবং তৈরি পোশাক রফতানিতে পুনরুদ্ধারের লক্ষণ অর্থনীতির বহিরাগত ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হয়েছে।
তবে রাজস্ব খাতে চাপ এখনো রয়ে গেছে। এনবিআরের কাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রমের কারণে জুন মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়নি। কিছু দপ্তরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় এই প্রভাব পড়ে।
ব্যাংক খাতেও একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ টানা ছয় মাস ধরে ৮ শতাংশের নিচে রয়েছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নীতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ এর অন্যতম কারণ।
এছাড়া, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে, যা ভবিষ্যতে বিনিয়োগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, যদিও তাৎক্ষণিক প্রবৃদ্ধির ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করে, সাহসী নীতিগত সিদ্ধান্ত, প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতার ব্যবহারে দক্ষতা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগে স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করাই এখন সময়ের দাবি।
সব মিলিয়ে, জুলাইয়ে অর্থনীতির কিছু ইতিবাচক চিত্র উঠে এলেও এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কাঠামোগত সংস্কার এবং বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছে জিইডি।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.