বিমান দুর্ঘটনায় ১৭ পরিবারকে ২.৭৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

২০১৮ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় ৭১ আরোহীর মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে চলমান একটি মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে নেপালের একটি আদালত। ওই রায়ে দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ যাত্রীর পরিবারকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানি থেকে প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার ডলার করে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তার বাইরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (নেপালি মুদ্রায় যা প্রায় ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ রুপি) পরিশোধ করতে হবে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি পরিবারকে এই অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

নেপালের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার এভাবে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সক্ষম হলো। দেশটিতে গত সাত দশকে ৭০টি বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৯৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যার বেশিরভাগের পেছনে ছিল গুরুতর অবহেলা।

তবুও এর আগে কোনো বিমান সংস্থাকে এভাবে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নজির দেখা যায়নি। কাঠমান্ডু জেলা আদালতের এই রায় সেই প্রেক্ষাপটকে পাল্টে দিয়েছে বলা যায়। এর আগে কোনো বিমান সংস্থাকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

তবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স চাইলে উচ্চ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে আপিল করতে পারবে। কিন্তু তারপরেও এই রায়কে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো বিমান সংস্থার ইচ্ছাকৃত অবহেলা বা মারাত্মক গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে যাত্রী বা তাদের পরিবার আদালতের শরণাপন্ন হয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। এমনকি সীমাহীন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাওয়ারও সুযোগ থাকবে।

এদিকে ইউএস-বাংলার মুখপাত্র মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ল ফার্ম নিয়ম অনুযায়ী উচ্চ আদালতে আপিল করবে।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত ফ্লাইটটি। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ৭৬ আসনের বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ বিধ্বস্ত হয়ে প্লেনটিতে আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫১ জন প্রাণ হারান। নিহতদের মধ্যে ২২ জন ছিলেন নেপালের নাগরিক, ২৮ জন বাংলাদেশি এবং একজন চীনা নাগরিক।

এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একইসঙ্গে বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ ৮ কিউ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজের ইতিহাসেও এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। সাত বছর ধরে চলা মামলার রায়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের গুরুতর গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.