বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় আর্থিক খাত কখনোই ঘুরে দাঁড়াবে না: গভর্নর

বর্তমান বিচার বিভাগ যেভাবে চলেছে, একইভাবে চললে আর্থিক খাত কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তাই সরকার শিগগিরই অর্থঋণ আদালত আইন রিভাইজ (পুনঃপর্যালোচনা) করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে গভর্নর মনসুর এসব কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, বর্তমান বিচার বিভাগ যেভাবে চলছে, একইভাবে চলতে থাকলে আর্থিক খাত কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকার এবং বিচার বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে হলে আমাদেরও সেই রকম সক্ষমতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।”

খেলাপি ঋণ ইস্যুতে গভর্নর মনসুর বলেন, খেলাপিকে খেলাপিই বলা উচিৎ। হাইকোর্ট থেকে কেউ স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) আনলেও আমরা তাকে শ্রেণিকরণ করব। কারণ একজন গ্রাহককে ব্যাংক যেভাবে চেনে, আদালতের পক্ষে সেটি সেই গভীরতায় বোঝা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, সম্প্রতি অগ্রণী ব্যাংকের এক ঘটনায় দেখা গেছে, স্টে অর্ডার থাকা সত্ত্বেও এক ঋণগ্রহীতাকে খেলাপি ঘোষণা করা হয়েছিল, যার ফলে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। গভর্নরের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্তই নীতিগতভাবে সঠিক।

ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠনে এক বছরের অগ্রগতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, আমরা দেখেছি এটা একদিনের ঘটনা নয়। প্রায় আট-নয় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করা হয়েছে। এরপর সেগুলো থেকে পরিকল্পিতভাবে অর্থ পাচার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ‘হানিপট’ ছিল—একটি মধুর ভাণ্ডার, যেখান থেকে মধু লুট করা হয়েছে। জনগণের আমানতের নিরাপত্তা রক্ষার কথা কেউ ভাবেনি। বরং এটি লুটপাটের একটি খাত হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

গভর্নর আরও বলেন, এই অর্থ লুটের প্রক্রিয়া সরকারের চোখের সামনেই ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও নজরের সামনেই হয়েছে। অথচ কেউ কোনো কথা বলেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, সিভিল সোসাইটি তখনও কিছু বলেছিল, আমরাও বাইরে থেকে বহুবার সতর্ক করেছিলাম। আমি নিজে এক প্রাক্তন গভর্নরকে সরাসরি বলেছিলাম, ‘মিস্টার এক্স’-এর বিষয়ে সাবধান থাকুন। কারণ তিনি যদি ব্যাংকগুলো হাইজ্যাক করেন, তাহলে পুরো খাত ধসে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, আমি তখন বলেছিলাম, একসাথে কয়েকটি ব্যাংক পড়লে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সও দরকার হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাই-ই হয়েছে—পুরো ব্যাংক খাতকে এক পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে লুটপাটের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.