চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে সাত গুণ

চীনের বিরল খনিজ চৌম্বক রপ্তানি হঠাৎ করেই নতুন গতি পেয়েছে। গত জুন মাসে এই খাতের রপ্তানি আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন চীন থেকে তাদের এই বিপুল পরিমাণ আমদানি বিশ্ববাজারে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

চীনের শুল্ক প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির বিরল খনিজ রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ মেট্রিক টনে—যা মে মাসের তুলনায় ৬৬০ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরল খনিজ ও চৌম্বক পদার্থ নিয়ে চলমান জটিলতার সমাধানে একটি সমঝোতা হয়েছে।

এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চিপ কোম্পানি এনভিডিয়া জানিয়েছে, তারা পুনরায় চীনে এইচ২০ এআই চিপ বিক্রি শুরু করবে। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে একটি বড় কারণ হলো, এই এআই প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় চীনের বিরল খনিজ উপাদান—যা মেমোরি বা প্রসেসরের বাইরের যন্ত্রাংশে অপরিহার্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈদ্যুতিক যানবাহন, বায়ুচালিত টারবাইন এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহৃত এসব খনিজ উপাদান প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অন্যতম ভিত্তি। নিওডিমিয়াম ও স্যামারিয়ামের মতো উপাদানে তৈরি চৌম্বক ছাড়া ইলেকট্রিক মোটর, ড্রোন, স্মার্টফোন এমনকি এমআরআই যন্ত্রও কার্যকরভাবে চালানো সম্ভব নয়।

বিশ্বের মোট বিরল খনিজ চৌম্বক পদার্থের ৯০ শতাংশের বেশি এখনো চীন সরবরাহ করে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের জবাবে চীনও বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে এপ্রিল ও মে মাসে এই খাতে রপ্তানি হঠাৎ কমে যায় এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হয়। অনেক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়।

তবে জুন মাসে পরিস্থিতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। চীন এ মাসে বিশ্ববাজারে মোট ৩ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন বিরল খনিজ ও চৌম্বক পদার্থ রপ্তানি করেছে। মে মাসে এই পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৩৮ টন। ফলে জুনে রপ্তানি বেড়েছে ১৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় এখনো রপ্তানি কম রয়েছে ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে লাইসেন্স পাওয়ায় জুলাই মাসে রপ্তানি আরও বাড়তে পারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে চীনের মোট রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩১৯ মেট্রিক টন, যা গত বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ কম।

চলুন দেখে নেওয়া যাক, গত জুন মাসে কোন কোন দেশ চীনের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিরল খনিজ আমদানি করেছে।
ক্রম অনুসারে দেশগুলো হচ্ছে: জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পোল্যান্ড, জাপান, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি।

এই ক্রমবর্ধমান আমদানির প্রবণতা শুধু প্রযুক্তি নয়, বরং ভবিষ্যতের শক্তি, নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য গঠনের দিকেও ইঙ্গিত দেয়। কে এই মূল্যবান খনিজ নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটিই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের প্রযুক্তি ও ক্ষমতার ভাগ্যরেখা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.