ডলার নির্ভরতা কমাতে বিশ্ববাজারে সোনার চাহিদা বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো

বিশ্ববাজারে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি থামছে না, আর এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫’-এর তথ্যমতে, বিশ্বের ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বর্ণ ভান্ডার আরও বাড়াতে আগ্রহী।

শনিবার (১৯ জুলাই) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ডলারকে ভূ-রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, তা অনেক দেশকে বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সোনা মজুতে মনোযোগ দিচ্ছে।

ডব্লিউজিসির সমীক্ষায় দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, তাদের বর্তমান স্বর্ণ মজুত আগামী ১২ মাসের জন্য যথেষ্ট। তবে তা থেমে থাকছে না। আইএমএফের এক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত ৯০০ টন সোনা কিনতে পারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টর ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে ছিল ৩৬ হাজার ২০০ টনের মতো সোনা, যা ছিল সরকারি রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ। অথচ ২০২৩ সালে এই হার ছিল ১৫ শতাংশের মতো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিবর্তনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দেশগুলো একদিকে যেমন বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য একসঙ্গে কাজ করছে, অন্যদিকে সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতাও তারাই।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (পিপলস ব্যাংক অব চায়না) একটানা সপ্তম মাসেও সোনা কেনা অব্যাহত রেখেছে। মে মাসে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৮৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যার একটি বড় অংশই এখন সোনায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

এই সময়ে সোনার দাম কমেনি বরং বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ ডলারে পৌঁছায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বর্তমানেও এ দর রয়েছে ৩ হাজার ২৫০ ডলারের আশপাশে। তবুও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমেনি।

চীনের এই প্রবণতার আরেকটি দিক দেখা গেছে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডে তাদের বিনিয়োগে। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে চীনের হাতে ছিল ৭৮৪ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন ট্রেজারি বন্ড, এপ্রিলের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৭৫৭ বিলিয়ন ডলারে। মাত্র দুই মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়েছে বেইজিং।

ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনা সংগ্রহ করছে বড় ও ছোট উভয় ধরনের খনি থেকে। এর মধ্যে বড় খনি থেকে ৩৭ শতাংশ এবং ছোট খনি থেকে ১৬ শতাংশ সোনা সংগ্রহ করা হয়, বাকিটা সরাসরি বাজার থেকে কেনা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা যত বাড়বে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার প্রতি ঝোঁক ততই বাড়বে। ফলে ভবিষ্যতেও সোনার দাম আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন তারা।

অর্থসূচক/এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.