ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কায় মার্কিন পরিবারের ব্যয় বাড়ছে ২৪০০ ডলার

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কনীতির প্রভাব মার্কিন অর্থনীতিতে জোরালোভাবে পড়তে শুরু করেছে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, নতুন শুল্ক কার্যকর থাকলে ২০২৫ সালে প্রতিটি মার্কিন পরিবারকে গড়ে অতিরিক্ত ২ হাজার ৪০০ ডলার ব্যয় করতে হতে পারে।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে আমদানি পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি মার্কিন ভোক্তাদের পকেটে পড়বে। গবেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শুল্ক কার্যকর থাকলে গড় কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াবে ১৮ শতাংশ, যা ১৯৩৪ সালের পর সর্বোচ্চ।

গবেষণা অনুযায়ী, স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির হার ১.৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বাড়বে বেকারত্বের হার, যা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত উল্টো স্রোত বইয়ে দিতে পারে মার্কিন শ্রমবাজারে।

দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমে যেতে পারে ০.৭ শতাংশ। দীর্ঘ মেয়াদে এ ক্ষতি আরও তীব্র হতে পারে। প্রতিবছর গড় জিডিপি কমে যেতে পারে ০.৪ শতাংশ, যার বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ১১০ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নতুন শুল্কের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে পোশাক, জুতা, ও টেক্সটাইল শিল্পে। স্বল্প মেয়াদে এসব পণ্যের দাম ৩৭ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে গড় মূল্যবৃদ্ধিকে ১৮ শতাংশে নিয়ে আসবে।

এছাড়া ধাতু, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও চামড়াজাত পণ্যের দাম যথাক্রমে ৪৩, ২৬ ও ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস পণ্যেও ১১ থেকে ১৮ শতাংশ দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

যদিও খাদ্যপণ্যে তুলনামূলক কম প্রভাব পড়বে, তবু নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে মূল্যবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস। বিশেষ করে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা কফি ও কমলার রসে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসানোয় এসব পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে ৮৩ শতাংশ করপোরেট নির্বাহী আগামী ছয় মাসে পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁদের অর্ধেকের বেশি বলেছেন, ইতিমধ্যেই মুনাফার হার কমেছে, তবে ভোক্তাদের ওপর এখনো পুরো চাপ পড়েনি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্মাণ ও কৃষি খাত এ শুল্কের কারণে বিপর্যস্ত হতে পারে। যদিও উৎপাদন খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধির আশা করা যাচ্ছে, তা সামগ্রিক ক্ষতির তুলনায় নগণ্য।

ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে, শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও ‘স্বনির্ভর’ করে তোলা হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, অতিরিক্ত শুল্ক ভোক্তা ব্যয় বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতির চক্রকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার দিকে যেতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তারা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.