দুই সপ্তাহে আত্মহত্যা করলেন গাজায় যুদ্ধে যাওয়া চার ইসরায়েলি সেনা

গাজা যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত চার সেনাসদস্য আত্মহত্যা করেছেন, যাঁরা সক্রিয়ভাবে গাজা যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

বুধবার (১৭ জুলাই) ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এই তথ্য জানিয়েছে।

আত্মহত্যাকারী সেনাদের মধ্যে দুজন ছিলেন কনস্ক্রিপ্ট, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিযুক্ত সক্রিয় সেনা। অপর দুজন ছিলেন রিজার্ভ সেনা, যাঁদের যুদ্ধের প্রয়োজন মেটাতে ডেকে আনা হয়েছিল এবং যাঁরা সম্প্রতি দায়িত্ব শেষ করে ফিরে গেছেন।

তাদের মৃত্যুর ঘটনা আবার নতুন করে সেনা সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্য ও যুদ্ধ-পরবর্তী ট্রমার বিষয়টি সামনে এনেছে।

এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই, টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, আরেক সেনাসদস্য আত্মহত্যার চেষ্টা করে গুরুতর আহত হয়েছেন।

হারেৎজের তথ্যমতে, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ৪৩ ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৪ জন আত্মহত্যা করেছেন কেবলমাত্র চলতি বছরের প্রথম সাড়ে ছয় মাসেই। ২০২৪ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২১ জন, যা ২০১১ সালের পর সর্বোচ্চ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, “এই যুদ্ধ আত্মাকেও হত্যা করে।”

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা ইসরায়েলি সামরিক পরিসংখ্যানে পুরোপুরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারণ, নিয়মিত দায়িত্বে না থাকলে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত হলে সেনা সদস্যদের আত্মহত্যা তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত করা হয় না।

হারেৎজ জানায়, কমপক্ষে আরও ১২ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন, যাঁরা আনুষ্ঠানিক তালিকায় নেই, কিন্তু যাঁদের মৃত্যু সামরিক দায়িত্বের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।

এমন সময় এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে, যখন গাজায় হামাসের আক্রমণ জোরালো হয়েছে এবং ইসরায়েলি সেনাদের ওপর প্রতিনিয়ত প্রাণঘাতী হামলা চালানো হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে ১২ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন হামাসের আক্রমণে।

গোটা যুদ্ধ চলাকালীন এখন পর্যন্ত ৮৯৩ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১৯ হাজার সেনা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে ১৭ হাজার শিশু রয়েছে।

যুদ্ধ শুধু শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির সীমায় থাকে না, তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্বাস্থ্য, পরিবার ও সমাজেও ছড়িয়ে পড়ে। গাজা যুদ্ধ তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.