যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা করলে বিশ্ব অর্থবাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এর ফলে মার্কিন ডলার ও সরকারি বন্ডের মান ধসে পড়তে পারে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সুনামেও চির ধরতে পারে।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাওয়েলকে সরানোর চিন্তা করছেন। এর পরপরই মার্কিন ডলার সূচক ০.৮ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়।
তবে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প জানান, তিনি এখনই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। তিনি বলেন, “আমরা কিছু করার পরিকল্পনা করছি না। তবে আমি কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছি না।”
এই মন্তব্যের পর বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হয়, ডলার সূচকের পতন কমে ০.৩ শতাংশে নামে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেডের স্বাধীনতা মার্কিন অর্থনীতির মেরুদণ্ড, এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা হারাবে যুক্তরাষ্ট্র। এতে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বাড়বে, বন্ডের সুদহার বেড়ে যাবে, এবং ডলার থেকে পুঁজি প্রত্যাহারের ঝুঁকি তৈরি হবে।
Deutsche Bank-এর বিশ্লেষক জর্জ সারাভেলোস বলেন, “পাওয়েলকে সরিয়ে দেওয়া হলে ডলার এক দিনে ৩ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যেতে পারে।” তিনি এটিকে “আন্ডার-প্রাইসড ইভেন্ট রিস্ক” বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে ফেডের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিপদ রয়েছে। ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ফেড চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে আসছেন, মূলত সুদের হার না কমানো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এমনকি তিনি ৩ শতাংশ হার কমানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন, যা এককথায় নজিরবিহীন।
তবে আইনগতভাবে প্রেসিডেন্ট সরাসরি ফেড চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করতে পারেন না, যদি না কোনো গুরুতর অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ থাকে।
এদিকে সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ফেডের সদর দপ্তরের সংস্কার কাজের ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এই ব্যয়বহুল রিনোভেশনকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে এটিকে পাওয়েলকে অপসারণের ‘কারণ’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা চলছে।
তবে ফেড জানিয়েছে, ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত অ্যাসবেস্টস, উচ্চ জলস্তর ও নকশা পরিবর্তনসহ একাধিক বাস্তব কারণ রয়েছে।
জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডাইমন বলেন, “ফেডের স্বাধীনতা শুধু বর্তমান চেয়ারম্যানের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ চেয়ারম্যানদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এতে হস্তক্ষেপ করলে ঠিক উল্টো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেতে পারে।”
রিপাবলিকান সিনেটর জন কেনেডি হুঁশিয়ার করে বলেন, “পাওয়েলকে বরখাস্ত করলে স্টক মার্কেট ও বন্ড মার্কেট দুটোই ধসে পড়বে।”
ট্রাম্প চাইলেও আইনগতভাবে পাওয়েলকে সরানো সহজ নয়। তবে এমন সম্ভাবনার আলোচনাই বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দরজা খুলে দিতে পারে, যার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।
সূত্র: সিএনএন



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.