গাড়িবহরে হামলার পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ‘আশ্রয় নিয়েছেন’ এনসিপি নেতারা

গোপালগঞ্জ সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় সড়ক অবরোধ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা । তাঁরা চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেয়। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্য দিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এরপরই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার প্লাটুন সদস্য। এদিকে দু’পক্ষের সংঘর্ষ চলার মধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, সমাবেশ পরবর্তী হামলার ঘটনায় গোপালগঞ্জ শহর থেকে বের হতে না পেরে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিল্ডিংয়ের ভেতর প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন দাবি করেন, আমাদেরকে পুরোপুরি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। খুনি হাসিনার কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদেরকে এখানে আসার পথেই বাধা দিচ্ছিল। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এমন হয়েছে যে প্রশাসনকে আমরা প্রটোকল দিয়ে নিয়ে আসছিলাম। আমরা গোপালগঞ্জবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এখানে সমাবেশ করছিলাম। করার পর বের হওয়ার সময় আওয়ামীলীগের গুন্ডারা মুহুর্মুহু গুলি শুরু করেছে। পুলিশ লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানতাম না এটা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। আমাদেরকে পুলিশ ফেলে চলে যাওয়ায় আমরা যেদিকে পেরেছি বহর নিয়ে চলে আসছি। আসার পর আমরা দেখলাম যে এটা পুলিশ সুপারের কার্যালয়।

এর আগে আজ দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় আয়োজিত এনসিপির সমাবেশের মঞ্চেও এ হামলা চালায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। সমাবেশের মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক, চেয়ার ভাঙচুরসহ উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এরপর হামলা-ভাঙচুরের মধ্যেই গোপালগঞ্জের সমাবেশমঞ্চে উপস্থিত হন এনিসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা।

দুপুর ২টার আগেই দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠেন। ২টা থেকে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। সেখানে প্রথমে মাইক হাতে কথা বলেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এরপর মাইক হাতে নিয়ে টানা স্লোগান দিয়ে সমাবেশস্থল মুখর করে রাখেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তার স্লোগানে সভামঞ্চসহ পুরো সমাবেশস্থল যেন নতুন করে প্রাণ পায়। এসময় সভামঞ্চে উপস্থিত থাকা এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, সারোয়ার তুষারসহ সবাই হাসনাতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।

এর কিছুক্ষণ পর নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দিয়ে সভা শেষ করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে সমাবেশস্থল ত্যাগের ঘোষণা দেন সারজিস আলম। এরপর পৌরপার্ক এলাকা ত্যাগ করার কিছু সময় পর হামলার মুখে পড়ে এনসিপির গাড়িবহর। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে কয়েক রাউন্ড বাবার বুলেট ও সাউন্ড ছুড়তে দেখা গেছে হয়। এ সময় গাড়িবহর লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.