আজ ১৬ জুলাই। দেশের বড় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের বীজ রোপিত হয়েছিল এই দিনে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের এই দিনে নিরীহ শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পুলিশের অব্যাহত গুলির সামনে তিনি দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দিয়েছিলেন। নিরস্ত্র সাঈদের বুকে বর্বর পুলিশ একের পর এক গুলি চালায়। এই ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ছাত্রদের আন্দোলন গণ মানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। এর এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন। এদিন ফের দেশব্যাপী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পাশাপাশি পুলিশও সেদিন মারমুখী অবস্থানে ছিল। এদিন দেশের অন্য অনেক এলাকার মতো রংপুর বিক্ষোভের জনপদে পরিণত হয়। এই আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এর নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। আন্দোলন বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল ছিল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে নগরীর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
প্রথম দিকে মিছিলে ১৫ জনের মতো উপস্থিতি দেখা গেলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন রংপুর নগরী থেকে মিছিল আসতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সেই মিছিলে আস্তে আস্তে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ক্যাডাররা এই আন্দোলনকে দমন করতে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। দফায় দফায় হামলা চালায় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর। পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড আর গুলি বর্ষণ করে।
১৬ জুলাই সকালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। সেখানে বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এরপর আড়াই কিলোমিটার দূরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যখন মিছিলটি যাত্রা করে প্রেসক্লাব অতিক্রম করার আগে যোগ দেন সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও সব স্তরের জনতাও।
মিছিলটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে পৌঁছালে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে থাকে।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পুলিশও হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে গুলি, রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
এ সময় আবু সাঈদ একাই পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে বুক চেতিয়ে বলতে থাকেন, ‘গুলি করলে কর আমি বুক পেতে দিয়েছি’। এ সময় পুলিশের টার্গেট করা গুলিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। আবু সাঈদের মুখ দিয়ে তখন রক্ত বের হচ্ছিল। সারা শরীরে গুলি আর রাবার বুলেটের ক্ষত। এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.