হামাসের ‘ভূগর্ভস্থ শহর’: যে প্রযুক্তির কাছে অসহায় ইসরায়েলি সেনারা

গাজায় প্রতিরোধ বাহিনীর টানেল নেটওয়ার্ক দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একজন ইহুদি বিশ্লেষক। গাজায় যুদ্ধ শুরুর দুই বছর পার হলেও ইসরায়েলিরা এই টানেল নেটওয়ার্কের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তারা এটা ভেবে বিস্মিত যে, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের টানেলগুলো যুদ্ধে ব্যাপক প্রভাব রাখছে।

হামাসের বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক কার্যত একপ্রকার ‘ভূগর্ভস্থ শহর’। এসব টানেল কেবল সামরিক চ্যালেঞ্জ নয় বরং ইসরায়েলি শাসক গোষ্ঠীর জন্য একটি কৌশলগত রহস্য হয়ে আছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল তাদের ঘোষণা অনুযায়ী ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ধ্বংস করতে পারেনি বরং তারা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি সংগঠিত ও জটিল প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, হামাসের এই টানেল প্রযুক্তির কাছে ইসরায়েলি সেনারা এতটাই অসহায় যে, তারা প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে নর্দমায় আশ্রয় নেয়। এর আগে ইসরায়েলি টিভি চ্যানেল ‘ফোরটিন’- এর সাংবাদিক হালেল বেটন একটি ছবি প্রকাশ করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে- রকেট হামলার সময় এবং সাইরেন বাজানোর পর ইসরায়েলি সেনারা নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনে লুকিয়ে পড়ছে।

পার্স টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি দৈনিক ইয়াদিউত আহারোনোত-এর সামরিক বিশ্লেষক ইউসি ইয়াহোশুয়া গাজার প্রতিরোধ বাহিনীর টানেল সম্পর্কে লিখেছেন, একবার চিন্তা করুন আপনার পায়ের নিচেই একটি অন্য ধরণের পরিপূর্ণ শহর লুকিয়ে আছে। গাজা উপত্যকার নিচে গড়ে ওঠা এই অবকাঠামো কোনো সাধারণ বিশ্রাম কক্ষ নয়, যেটার জিনিসপত্র বাজার থেকে কেনা হয়েছে বলে সহজেই ধ্বংস করা যাবে-এগুলো ধ্বংস করতে চাইলে সুসংগঠিত ও পেশাদার তৎপরতা জরুরি।

ইসরায়েলি রিজার্ভ বাহিনীর জেনারেল ইসহাক ব্রিক বাস্তবতা স্বীকার করে বলেছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়াল জমির জনগণকে মিথ্যা বলছেন এবং তিনি নিজেও জানেন যে, হামাসকে সামরিক চাপ দিয়ে পরাজিত করা এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। হামাসকে হারানো যাবে না, কারণ তারা তাদের মূল শক্তি ফিরে পেয়েছে।

ইসরায়েলি বিশ্লেষক গাই ব্লিক ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভে শুক্রবার রাতে বলেছেন, ২৪ জানুয়ারি অর্থাৎ প্রায় দেড় বছর আগে আমি এই স্টুডিওতেই বসেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলাম, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের মাত্র ৩০ শতাংশ টানেল ধ্বংস করতে পেরেছে। সে সময় স্টুডিওর অনেকেই আমার বিরোধিতা করেছিল এবং এক জনপ্রিয় উপস্থাপক আমাকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন।

ব্লিক আরও বলেছেন, পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন যে, ‘আমরা চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র এক কদম দূরে রয়েছি’। এখন দেড় বছর পার হয়ে গেছে, আমরা এখনও এখানে বসে আছি, আর জনপ্রিয় সাংবাদিক আমিত সিগাল কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছেন—ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসের ২৫ শতাংশ টানেলও ধ্বংস করতে পারেনি! মোট কথা আমাদের মেনে নিতে হবে—আমরা হামাসের বাকি টানেলগুলো ধ্বংস করতে পারব না, এমনকি হামাসের সব সদস্যকে নির্মূল করাও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। পার্সটুডে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.