বাংলাদেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের মূল্য এক সপ্তাহে প্রায় ২ টাকা ৯০ পয়সা কমে এসেছে। বাজারে ডলারের চাহিদা হ্রাস এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এই দরপতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেশিরভাগ ব্যাংক রেমিট্যান্স ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা রেট অফার করেছে। যদিও কিছু ব্যাংক দিন শুরুর দিকে ১২০ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত রেট দিলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ লেনদেন ১২০ টাকার নিচে শেষ হয়। অথচ সপ্তাহের শুরুতে এই দর ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বর্তমানে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলারের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। রেট কমার সম্ভাবনায় অনেকে ডলার ধরে রাখতে না চেয়ে বিক্রি করে দিতে চাইছে।”
এমনকি এক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের কান্ট্রি হেড জানিয়েছেন, “আমি এক ব্যাংককে ১০ মিলিয়ন ডলার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তারা মাত্র ১ মিলিয়ন নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। আগে যে ডলার পাওয়া যেত না, এখন সেটিই ব্যাংকগুলো নিচ্ছে না।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এই সময়ে রপ্তানি আয়ের প্রবাহও স্বাভাবিক ছিল। এর ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ অনেক বেড়েছে।
এক বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি এমডি জানান, “আগে ১২০ টাকা ৮০ পয়সা রেটেও অনেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনত, এখন আমরা আরও কম দামে পাওয়ার প্রত্যাশা করছি। কারণ বেশি দামে কিনে পরবর্তীতে লোকসানে বিক্রি করতে হতে পারে।”
মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরা দর নির্ধারণ করে ডলার লেনদেন করতে পারে।
এই নীতি চালুর পর থেকেই ডলারের দাম ধীরে ধীরে কমছে।
এক সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারি আমদানির বিল পরিশোধে রিজার্ভ থেকে ডলার পেত। এখন তাদের বাজার থেকেই সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এর ফলে তারা বড় অঙ্কে রেমিট্যান্সের ডলার কিনে আগের বকেয়া বিল পরিশোধ করেছে এবং বর্তমানে অতিরিক্ত ডলারের প্রয়োজন নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের ধারা অব্যাহত থাকে এবং আমদানি চাপ না বাড়ে, তাহলে ডলারের দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে আবার ডলার কিনতে শুরু করলে সাময়িকভাবে দামে উল্টো চাপ পড়তে পারে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.