প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও)-এর দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেটের সম্প্রসারণ: টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি কাঠামো’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ কুতুব, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিএসই চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, আইসিবির এমডি নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুঁজিবাজার ডেস্কের পরিচালক ইস্তেকবাল, এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হাফিজ বক্তব্য রাখেন।
এতে বিএমবিএ সভাপতি মাজেদা খাতুন এবং কোষাধ্যক্ষ ইফতেখান আলম পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ইসি সদস্য সুমিত পোদ্দার।
মূল প্রবন্ধে মাজেদা খাতুন ব্যাখ্যা করেন কীভাবে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসই হতে পারে। এ সম্প্রসারণ পরিমানগত এর পাশাপাশি গুণগত পরিবর্তন প্রয়োজন। তিনি বলেন দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে কোটি টাকা আর্থিক সহায়তার তুলনায় নীতিগত সহায়তা প্রদান অধিক গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারী সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণসহ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, “বিনিয়োগ ঝুঁকি নিরসনের জন্য বাজারে পণ্য বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা জরুরি। এলক্ষ্যে, ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহকে বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা প্রদান ও ঘন ঘন রেগুলেসন পরিবর্তন না করা আবশ্যক।” তিনি উল্লেখ করেন, মার্চেন্ট ব্যাংকসমূহ পণ্য/সেবা বৈচিত্র্যকরণ ও আওতা বৃদ্ধিকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
ইফতেখার আলম তার প্রবন্ধে পুঁজিবাজারের ইকোসিস্টেমের বিদ্যমান সংকট ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন বর্তমান পুঁজিবাজার ব্যবস্থার প্রধান বাধাসমূহ:
১. মানি মার্কেটের তুলনায় পুঁজিবাজারে তহবিল সংগ্রহ প্রক্রিয়া অত্যধিক দীর্ঘ
২. আইপিও প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহারে নানা ধরণের বিধিনিষেধ
৩. ভ্যালুয়েশন পদ্ধতি অত্যন্ত কঠোর ও সীমিত
৪. প্রাইভেট কোম্পানির জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির কোনো সুযোগ নেই
৫. অতিরিক্ত ডকুমেন্টেশন বা কাগজপত্রের জটিলতা
৬. লভ্যাংশ ঘোষণার ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ ক্যাটেগরাইজেশন, যা কোম্পানির সামগ্রিক পারফরম্যান্স প্রতিফলিত করে না
তিনি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে দ্রুত ও কার্যকর তালিকাভুক্তির জন্য আইপিও প্রক্রিয়া আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকার পুঁজিবাজারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্বশীল ভূমিকা, নীতিমালার সমন্বয়, এবং স্বচ্ছতার ওপর জোর দেন। পাশাপাশি, তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রয়োজনীয়তা ও পুঁজিবাজার এবং অর্থবাজারের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি লিস্টিংয়ের কাজ স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মাধ্যমে আইপিও প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার অবসান হবে হবে।
তিনি বলেন, গত ১ বছরে কোনো আইপিও আসেনি। এই আইপিও আনা বিএসইসির কাজ না। এ দায়িত্ব মার্চেন্ট ব্যাংকারদের। ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক গত ১৫ বছরে ১৩৮ কোম্পানি শেয়ারবাজারে এনেছে। এক্ষেত্রে তাদের পারফরমেন্স কোথায়?

এসময় তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে আইপিওতে আসা কিছ কোম্পানির গুণগতমান নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে সব কোম্পানির দর বাড়বে, এটা ভাবাও ঠিক না।
মমিনুল ইসলাম বলেন,পুঁজিবাদের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার শেয়ারবাজার। গত ১৫ বছরে আমাদের শেয়ারবাজারে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন সেগুলো সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। তবে সময় লাগছে। কারণ অনিয়ম ছিল ভয়াবহ।
অনুষ্ঠানে এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, কোনো কোম্পানি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পুঁজিবাজারে আসবে না। বাজারে আসার ঝুঁকি এবং প্রণোদনা বিশ্লেষণ করে তা লাভজনক মনে করলেই কোম্পানিগুলো বাজারে আসতে আগ্রহী হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইপিও অনুমোদন পেতে ২-৩ বছর সময় লাগে। কিন্তু ভারতে লাগে ৬ মাস। তাই আমাদেরকে আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করে সময় কমিয়ে আনতে হবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.