আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল কত ভোট পাবে তা নিয়ে এক জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।
সোমবার (৭ জুলাই) এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। মহাখালীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।‘যুবসমাজের পরিবর্তন : চাকরি, শিক্ষায় এবং জুলাই আন্দোলনের পর বদলানো রাজনৈতিক দৃশ্যপটে চলার পথ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
চলতি বছরের ২০ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত এই প্রতিবেদনের কাজ চলে। আট বিভাগের ২ জেলা ও ২ উপজেলা শহর ও গ্রামের তরুণদের মতামত গবেষণা প্রতিবেদনে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী দুই হাজার তরুণের (নারী ও পুরুষ) মতামত নেওয়া হয়েছে। এসব তরুণের মতে, এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট বিএনপি পাবে। এরপরে জামায়াতে ইসলামী ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে। এ ছাড়া বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পায় তাহলে ১৫ দশিমক ৮৪ শতাংশ ভোট পাবে বলে ওই তরুণেরা মনে করেন। তাঁদের মতে, অন্যান্য ইসলামিক দল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে।
এই জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, ভোট দেবেন না বলে জানিয়েছেন ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ এখনো ভোটার হননি।
জরিপের এই ফলাফল নিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, কেবল ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার জন্য এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে যে মতামত এসেছে, তা শুধু বাছাই করা ওই তরুণদের মতামত। এটাকে দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর বা অন্যান্য বয়সের মানুষের মতামত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না। বিশেষ করে রাজনীতির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে তা কখনোই করা সংগত হবে না।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তরুণদের ভাবনা সম্পর্কিত এ জরিপটি আজ সোমবার প্রকাশ করা হয়। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সানেমের গবেষণা সহযোগী সাফা তাসনিম। অনুষ্ঠানে তরুণদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
জরিপে জুলাই আন্দোলনের পর শিক্ষাগত প্রস্তুতি, কর্মসংস্থান, রাজনৈতিক সচেতনতা এবং ভবিষ্যৎ আশাবাদের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। জরিপের তথ্যমতে, তরুণদের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজনীতির তথ্য পান, ৪৭ দশমিক ৭ টেলিভিশন ও ১৩ শতাংশ খবর নেন পত্রিকা থেকে।
জরিপের একটি প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে তরুণ নেতৃত্বের দলগুলোর রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করেন কি না। এতে ৪২ শতাংশের বেশি তরুণ আশাবাদী বলে জানান। এ ছাড়া এই তরুণদের দলগুলো তরুণদের চাহিদা ও প্রয়োজনকে উপস্থাপন করতে পারছে কি না, সে প্রশ্নের জবাবে জরিপে দেখা যায়, নিশ্চিত নন ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ তরুণ এবং ৩০ শতাংশের বেশি তরুণ বলেছেন, এ দলগুলো তরুণদের চাহিদা ও প্রয়োজন কিছুটা উপস্থাপন করতে পারছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৬০ শতাংশ তরুণ পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান বিষয়ক সংস্কার চান। তরুণদের প্রায় ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ মনে করেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক। আর সহায়ক নয় বলে মনে করেন ৪৮.২৩ শতাংশ তরুণ। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ক্রমবর্ধমান উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ। একেবারে উদ্বিগ্ন নন বলে জানিয়েছেন ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর ৩০ শতাংশ বলেছেন কখনো কখনো উদ্বিগ্ন বা এ বিষয়ে মতামত নেই।
কত সময়ের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে- এর উত্তরে ৩৯ শতাংশের বেশি বলেছেন, তাঁরা জানেন না এবং সাড়ে ২২ শতাংশ বলেছেন, কখনোই না। অন্যদিকে ১১ শতাংশের বেশি বলেছেন, পাঁচ বছরের মধ্যে ক্ষমতায় আসবে।
জরিপে ৩৯ শতাংশ তরুণ দেশের রাজনীতির খোঁজখবর এবং ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ তরুণ ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে রাজনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখেন। ৫৬ শতাংশ তরুণ মনে করেন, সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি হবে। তবে মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ তরুণ সংস্কার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ৯৪ শতাংশ তরুণ মনে করেন, শিক্ষাখাতে সংস্কার প্রয়োজন।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.