লঙ্কানদের লড়াইয়ের পুঁজি

মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে নতুন যুগের শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে ৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। তাদের দুজনের অবসরের মাধ্যমে পঞ্চপাণ্ডবকে ছাড়া খেলতে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ২০ বছর এবং ৩৩১ ওয়ানডে পর সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের কেউই নেই বাংলাদেশের একাদশে। সবশেষ ২০০৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তাদের ছাড়াই ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ।

এদিকে চোট কাটিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফেরার ম্যাচেই দারুণ শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করা পাথুম নিশাঙ্কার বিপক্ষে মেইডেন ওভারে ইনিংসের শুরু করেন ডানহাতি এই পেসার। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারই খানিকটা ধুঁকছিলেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এসে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়েছেন নিশাঙ্কা। লঙ্কান ওপেনার আউট হয়েছেন ৮ বলে ০ রানে।

মেডেন দিয়ে ইনিংসের শুরুটা করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। পরবর্তীতেও শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের চাপে রেখেছিলেন ডানহাতি এই পেসার। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে এসে প্রথম উইকেটের দেখা পান তাসকিন। বাংলাদেশ পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হতে হয়েছে নিশান মাদুশকাকে। ১৩ বলে ৬ রান করেছেন লঙ্কান এই ওপেনার। নিজের আগের ওভারেই নিশান মাদুশকাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে ডানহাতি পেসার ফিরিয়েছেন কামিন্দু মেন্ডিসকে। তাসকিনের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে মিড অফে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। কামিন্দু আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই।

তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। ২৯ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন পাথুম নিশাঙ্কা, নিশান মাদুশকা এবং কামিন্দু মেন্ডিস। তবে তিন উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করছেন চারিথ আসালাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৫০ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। তিন উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন চারিথ আসালাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। পাওয়ার প্লে’র মধ্যেই দলের ৫০ রান পূরণ করেন এই দুজন। তবে দারুণ খেলতে থাকা কুশল মেন্ডিসকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি তানভির ইসলাম। লঙ্কান এই ব্যাটারকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেছেন তানভির।

রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি কুশল। ৪৩ বলে ৪৫ রানে ফিরতে হয় তাকে। ফলে আসালঙ্কার সঙ্গে তার ৬০ রানের জুটি ভাঙে। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই উইকেটের দেখা পেলেন তানভির। ২২ ওভারের মধ্যে দলীয় শতক পূরণ করে শ্রীলঙ্কা। জেনিথ লিয়ানাগেকে সঙ্গে নিয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন চারিথ আসালঙ্কা। ৬১ বলে ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর আগে কেবল একটি উইকেটই নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাকে বোলিং আক্রমণে দেখে অবাক হয় অনেকেই। তবে বল হাতে সবাইকে চমকে দেন শান্ত। প্রথম বলে চার হজম করলেও তৃতীয় বলে জানিথ লিয়ানাগেকে ফিরিয়েছেন শান্ত। তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন লিয়ানাগে। ক্যাচটি লুফে নেন তানজিম হাসান সাকিব। ১৫৩ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে শ্রীলঙ্কার। আসালঙ্কা- লিয়ানাগে মিলে দলের স্কোরবোর্ডে ৬৪ রান যোগ করেন। দলীয় ১৯২ রানে মিলান রত্নায়েকের উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ৩১ বলে ২২ রান করা রত্নায়েকেকে বোল্ড করে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব।

চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে তাকে বিদায় করেছেন তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের বলে জায়গা করে খেলতে গিয়ে ডিপে শামীম হোসেন পাটোয়ারির হাতে ক্যাচ দেন তিনি। দুই বল পর তাসকিন ফেরান মাহিশ থিকশানাকে। কাভারে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন জাকের আলী। এর খানিক আগেই বল করতে গিয়ে অস্বস্তি বোধ করায় মাঠ ছেড়ে উঠে যান আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে তানজিম সাকিবের বল ডিপ ফাইন লেগে ঠেলে এক রান নিয়ে ১১৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। আর তাতে ভর করে লঙ্কানরা লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায়। ইনিংসের শেষ ওভারে এসে সেঞ্চুরিত তুলে নেয়া আসালাঙ্কাকে ব্যক্তিগত ১০৬ রানে আউট করেছেন তানজিম সাকিব। এই পেসারের বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েছেন আসালাঙ্কা। পরের বলে ইশান মালিঙ্গা ৫ রান করে রান আউট হলে শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে যায় ২৪৪ রানে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.