বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে “প্লাস্টিক দূষণ আর নয় / End Plastic Pollution” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো একটি বিশেষ সেমিনার। দেশের ৩৩টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই আয়োজনে প্লাস্টিক দূষণ রোধে গণসচেতনতা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্প্রতিবার (২৬ জুন) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান হয়।
আয়োজক সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে: বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বেলা, এএলআরডি, নাগরিক উদ্যোগ, বারসিক, বাদাবন সংঘ, ক্যাপস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, আইডাব্লিউবি, পরিবেশ বার্তা, গ্রীন ভয়েস, সিডিপি, গ্রীন সেভার্স, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কোস্টাল এন্ড মেরিন স্টাডিজ, নোঙরসহ আরও অনেক সংগঠন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি। সঞ্চালনা করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহ-সভাপতি, অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন এএলআরডি’র নির্বাহী প্রধান জনাব শামসুল হুদা, এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন, বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট তাসলিমা ইসলাম, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের প্রাক্তন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান এবং বাংলাদেশ পাঠ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ এম জাকির হোসেন।
মূল প্রবন্ধে ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, “অব্যবস্থাপনায় ফেলা প্লাস্টিক মাটি ও পানি দূষণ করছে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করছে এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। প্লাস্টিক ভেঙে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়, যা মানুষের দেহেও প্রবেশ করছে। কলের পানিতে ৮৩% প্লাস্টিকের অস্তিত্ব রয়েছে এবং একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে ১,৩০,০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণ করে।”
তিনি জানান, বর্তমানে বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদন ০.৮৫ বিলিয়ন টন, যা ২০৫০ সালে দাঁড়াবে ৫৬ বিলিয়ন টনে এবং ২১০০ সালে ২৬০ বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে। তখন প্লাস্টিক বৈশ্বিক কার্বন বাজেটের ৫০% পর্যন্ত অবদান রাখতে পারে।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ এজাজ বলেন, “ঢাকায় ডেঙ্গু বৃদ্ধি এবং ড্রেনজ ব্যবস্থার অকার্যকারিতার অন্যতম কারণ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। আমরা উত্তর সিটির উন্মুক্ত স্থানগুলোতে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করেছি।”
ড. কামরুজ্জামান বলেন, “প্লাস্টিকের বিপণন ও ব্যবহারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। সহজলভ্য বিকল্প তৈরি ও বাজারজাত করতে হবে।”
ড. মোবারক আহমদ খান জানান, “২০০২ সালে আইন করেও আমরা পলিথিন নিষিদ্ধ করতে পারিনি। পাটের সোনালী ব্যাগের উৎপাদনে অনুমতি না পাওয়া দুঃখজনক।”
শামসুল হুদা বলেন, “দ্রুত বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে পরিবেশ আদালত চালু করতে হবে।”
ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “ক্ষুদ্র প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিকের বিকল্প বের করতে হবে। সব দায়িত্ব সরকারের নয়, আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।”
অ্যাডভোকেট তাসলিমা ইসলাম বলেন, “আইনের সংস্কার করে হলেও পরিবেশ রক্ষায় আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।”
ড. এইচ এম জাকির হোসেন বলেন, “পলিথিন ও প্লাস্টিকমুক্ত জীবন গড়ার প্রতিজ্ঞা আমাদের সবাইকে করতে হবে।”
সেমিনারে আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.