অর্থ পাচারে অডিটরদেরকে সহায়ক হিসেবে দায়ী করা অযৌক্তিকঃ আইসিএবি

অডিটরদের (চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট) ব্যর্থতা ও যোগসাজশে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে পেশাদার হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)। তারা এ অভিযোগকে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, আর্থিক হিসাববিবরণী নীরিক্ষার সুযোগ পাওয়ার লক্ষ্যে একটি সংগঠন তাদেরকে এমন অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সিএ ভবনে অনুষ্ঠিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।

এর আগে গতকাল বুধবার (১৮ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে হিসাববিদদের অন্য একটি সংগঠন ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) অভিযোগ করেছিল, অডিটরদের ব্যর্থতায় গত সমকারের সময়ে ব্যাংকে বিপুল খেলাপী ঋণ তৈরি ও তার বড় অংশ পাচার হয়েছে। তারা তাদের সদস্যদেরকেও বিশেষ কিছু খাতের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

আজ আইসিএবি সংবাদ সম্মেলন করে আইসিএমএবি’র ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। আইসিএবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, আইসিএমএবি কর্তৃক মানি লন্ডারিং, খেলাপি ঋণ, শেয়ারবাজার সংকট, বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস ইত্যাদি বিষয়ে অডিটরদেরকে সংশ্লিষ্ট করা অডিট পেশাকে হেয় করার অপচেষ্টা মাত্র।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইসিএবি’র সভাপতি মারিয়া হাওলাদার। উপস্থিত ছিলেন আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন, কাউন্সিল সদস্য মো. শাহাদাত হোসেন, মো. মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, সাব্বির আহমেদ ও জেরিন মাহমুদ হোসেন প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে যে লুটপাট হয়েছে, তা অডিটরদের নজরে এলেও তারা প্রকাশ করতে পারেননি। কারণ, আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের যেন হাত-পা বাঁধা ছিল। বাধ্য হয়েই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালার ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ শনাক্ত ও প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়েছে অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ফলে অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য অপ্রকাশিত থেকে গেছে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই দায়ী করছেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা।

আর্থিক খাতের বিশেষ করে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনেক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কিন্তু অডিট রিপোর্টে প্রকাশ পায়নি— এই দায় কার? সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইসিএবির কাউন্সিল সদস্য মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, তখন আমরা অনেক কিছু দেখেছি কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনি কারণ আমাদের হাত-পা বাঁধা ছিল।

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, ঋণ খেলাপি হয়েছে দেখেছি কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি বলে দিয়েছে এটি খেলাপি দেখানো যাবে না। আবার অনেক ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হওয়ার পর আদালতে গেছেন বিচারক বলে দিয়েছেন ঋণ খেলাপি করা যাবে না; ওই সময় আমাদের কিছু করার ছিল না।

তিনি জানান, আমরা প্রকাশ্য রিপোর্টে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ বা ইন্টার্নাল রিপোর্টে সব তথ্য দিয়েছি। কিন্তু এসব তথ্য সাধারণের কাছে প্রকাশ করা আমাদের এখতিয়ার বহির্ভূত, তাই জানাতে পারিনি।

তার এই অভিযোগকে সমর্থন করে সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিনসহ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের অন্যান্য সদস্যরাও দাবি করেন, ব্যাংকের ইচ্ছামতো অডিট রিপোর্ট তৈরি করতে বাধ্য করা হয়েছে। কারো ঘাড়ে একাধিক মাথা ছিল না যে তাদের দাবি না মেনে প্রকৃত রিপোর্ট প্রকাশ করবে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণের হার নির্ধারণ করে দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে লিখিত চিঠি পাঠানো হতো বলেও দাবি সংগঠনটির। প্রকৃত তথ্য লুকানোর কারণে আর্থিক খাতের যে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, এজন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি ও অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগকে দায়ী করেন আইসিএবি’র সদস্যরা।

আইসিএমএবি’র আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার দাবির বিরোধিতা করে আইসিএবি। সংগঠনটি জানায়, বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তৈরি ও তাদের মাধ্যমে অডিট করার দায়িত্ব একমাত্র আইসিএবি’র। এই সংস্থার পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (আইএফএসি) অনুসরণ করে। ফলে এখান থেকে পাস করা অডিটররা দক্ষ ও যোগ্য হন।

আইসিএবি জানায়, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার জন্য দেশে কেবল চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের আইনি স্বীকৃতি রয়েছে। তারা নিয়মিতভাবে গুণগত মান নিশ্চিতে কাজ করে। এ জন্য রয়েছে আলাদা কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স বিভাগ, তদন্ত ও শৃঙ্খলা কমিটি।

তারা আরও জানায়, কস্ট অডিটের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনে আইসিএমএবি’র সদস্যদের সুযোগ থাকলেও এ বিষয়ে কোনো বাস্তব অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এই কাজে আইসিএবি সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.