সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, আমরা কোনও জবাব পাইনি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য গত বছর চিঠি দেওয়া হযেছিল। এরপর আর চিঠি দেওয়া হয়নি জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা এখনো দ্বিতীয় কোনো পত্র দেইনি। তবে প্রয়োজন হলে অবশ্যই দেওয়া হবে। শেখ হাসিনার ব্যাপারে আমরা যতটুকু জানিয়েছি, সেটার কোনো প্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই।
উপদেষ্টা বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে আমি যেটা দেখতে পেয়েছি সেটি হলো-এটি আমাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। তাদের ওপর নির্ভরশীলতাটা কমে গেছে এবং আমাদের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। বরং একটি মেকানিজম দাঁড়িয়ে গেছে- দিল্লির পরিবর্তে চিটাগাং এবং সিলেট থেকে পণ্য যাচ্ছে। কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কাজেই আমি মনে করি, এটি একদিকে ভালো হয়েছে। কেন সবকিছুর জন্য অন্য দেশের ভেতর দিয়ে আমাদের ট্রানজিট করতে হবে। পণ্য এখান থেকে সরাসরি যেতে পারে এবং এখান থেকে এখন যাচ্ছে।
ভারত একের পর এক সুবিধা বাতিল করছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরাও আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী একটি সুবিধা বাতিল করেছি। আমরা স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছি। সেটি আমাদের প্রয়োজন ছিল বলেই করেছি। কিন্তু তারা যেটি করেছে, এটি তাদের প্রয়োজনের জন্য করেছে কিনা, তা আমি জানি না।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রথমদিকে প্রচণ্ড প্রতিবাদ করেছিল। ভারতীয় কূটনীতিকদের তলব করে প্রদিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড হলে সেসব করা হচ্ছে না কেন, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এগুলো গা সওয়া হওয়া সম্ভব নয়। এগুলো নিয়ে নমনীয়তা দেখানো সম্ভব নয়। আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করছি এবং এই প্রক্রিয়া চালু আছে। এ বিষয়ে আমরা অবশ্য শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করবো। এই বিষয়টিকে কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।
পুশ ইন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে স্বীকার করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, পুশ ইন হচ্ছে, ফিজিক্যালি এটি ঠেকানো সম্ভব নয়। এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মানুষকে ঠেলে পাঠানো (পুশ ইন) অব্যাহত রেখেছে ভারত। এটি বন্ধে ভারত সরকারকে আজ বা আগামীকাল (বুধবার) আরেকটি চিঠি দেবে বাংলাদেশ। এছাড়া, এই সমস্যা সমাধানে কনস্যুলার পদ্ধতির (কনস্যুলার ডায়লগ) আওতায় ভারতের সঙ্গে কাজ করতে চায় ঢাকা।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা বলেছি, এটা যেন সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী হয়। তারা কিছু ক্ষেত্রে বলেছে, এক্ষেত্রে কিছু জট আছে, তোমরা সেগুলো ঠিকমতো করছ না। আমরা চেক করে দেখেছি, দীর্ঘদিন আগের তালিকা (ভারতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশি) আছে একটা এবং আমরা পাশাপাশি এটাও দেখেছি যে, আসলে তাদের তালিকা অনুযায়ী আমরা চেকআপ করে অনেককে নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কাজেই দুই পক্ষেরই বক্তব্য থাকতে পারে এখানে। আমরা চেষ্টা করছি, কনস্যুলার ইস্যু নিয়ে একটা মেকানিজম আছে, সেটাকে ব্যবহার করে এ জিনিসটাকে একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার। আমরা চাইলে নিয়মিত পদ্ধতিতে জিনিসটি হতে পারে। নিয়মের বাইরে যেন না যায়।
কনস্যুলার ডায়ালগে বসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমরা বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় একটা চিঠি পাঠাব। যেটাতে আমরা কিছু পদ্ধতির কথা আরেকবার উল্লেখ করব এবং আমাদের যে পদ্ধতি আছে, কনস্যুলার আলাপ-আলোচনার, সেটাও আমরা ব্যবহার করার চেষ্টা করব। কনস্যুলার ডায়ালগ হতে পারে। যেহেতু এখন একটা ইস্যু আছে। এটাও হতে পারে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভারত এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এসব ব্যক্তি অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছিলেন। আর বাংলাদেশ সরকার বলছে, এভাবে পুশ ইন ঠিক নয়। যদি কোনো অবৈধ বাংলাদেশি ভারতে থেকে থাকে সেটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যেন ফেরত দেওয়া হয়।
সরকারের সংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে, ভারত থেকে পুশ ইন বন্ধে এখন পর্যন্ত পাঁচটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। এখন নতুন করে আরেকটি চিঠি যাবে দিল্লিতে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.