নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
সোমবার (২ জুন) নির্বাচিত সরকার না থাকায় প্রস্তাবিত বাজেট বিটিভির মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবেন তিনি।
উপদেষ্টা আসিফ তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চলতি বাজেটের চেয়েও ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে।’
জুলাইয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অবসান হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের। গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর নোবেল জয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ গ্রহণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের এটি প্রথম বাজেট।
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বিকেল ৪টায় ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ‘ফিড’ নিয়ে অন্যান্য সব বেসরকারি টেলিভিশন ও বেতারে একই সময়ে জাতীয় বাজেট বক্তব্য প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে এক তথ্য বিবরণীতে।
এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন দেশের দায়িত্বে ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল তখনকার অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য (২০০৮-২০০৯ অর্থবছর)।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ঘাটতি কমানো এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ করা। প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়ানোর একগুচ্ছ প্রস্তাব এবং ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ী মহলের ওপর চাপ বাড়বে।
২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে তা ৯ শতাংশে নামলেও তাতেও স্বস্তি নেই। সীমিত আয়ের মানুষ এখনও ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
এ কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষ নিত্য ব্যবহার করে এমন সব জিনিসপত্রে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নতুন করে শুল্ক বাড়ানো হলে আরেক দফা দাম বাড়তে পারে। এতে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয়ও বাড়বে। প্রতিবছর বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ভ্যাট ও শুল্ক-কর বাড়িয়ে থাকে। এতে বাজারে সেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়।
জানা গেছে, নতুন বাজেটে ৬২২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা হ্রাস এবং ১০০টি পণ্যে কাস্টমস ডিউটি কমানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। উপকৃত পণ্যের তালিকায় রয়েছে কোল্ড স্টোরেজ যন্ত্রপাতি, পেপার পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যান্সার চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল। এছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক অব্যাহতির প্রস্তাবও থাকছে। আমদানি ঘোষণায় ভুল থাকলে বর্তমানে ৪০০ শতাংশ শাস্তির পরিবর্তে তা কমিয়ে ২০০ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহনশীল হয়।
আসন্ন অর্থবছরের বাজেট হবে দেশের ৫৪তম বাজেট। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭২ সালে স্বাধীনতা-উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭২ সালের ৩০ জুন ওই বাজেট পেশ হয়। তাজউদ্দীন আহমদ ওই দিন একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, অর্থাৎ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। এরপর আরও দুবার বাজেট দেন তাজউদ্দীন আহমদ, সেটি সবশেষ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮৪ কোটি টাকার। ১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার বাজেট দিয়েছেন সদস্য প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও এম সাইফুর রহমান। দুজনেই ১২টি বাজেট উত্থাপন করেছেন। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিতই আওয়ামী লীগের হয়ে টানা ১০ বার বাজেট পেশ করেছেন। তিনি প্রথম বাজেট দেন ১৯৮২-৮৩ সালে, এরশাদের শাসনামলে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.