গুলিস্তান ব্লকেড, যান চলাচল বন্ধ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তরের দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গুলিস্তানের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে, ফলে ব্যস্ত এ এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সোমবার (১৯ মে) সকাল থেকে ডিএসসিসির নগর ভবন ব্লকেড ঘোষণা করে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। এদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে প্রথমে গুলিস্তান মাজারের সামনে এবং নগরভবনের সামনে জড়ো হয়। এতে বংশাল ও পল্টনমুখী সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

এ সময় তারা স্লোগান দেন- শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই। শপথ নিয়ে তালবাহানা চলবে না, চলবে না। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই। দফা এক, দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ। জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই।

নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরেও ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

ইশরাকপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগরভবনের মূল ফটক এবং অন্যান্য বিভাগের গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছেন। ফলে নগরভবনে প্রবেশ করা যাচ্ছে না এবং সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এদিকে গত ১৭ মে সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করা হয়েছিল। তাপস প্রভাব খাটিয়ে এই মামলা থামানোর চেষ্টা করেন। তখন আদালত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে সব আইনি পদক্ষেপ মেনে আমরা রায় পেয়েছি। কাজেই আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছেন, তারা আদালত অবমাননা করছেন।

গতকাল (১৮ মে) স্থানীয় সরকার বিভাগ এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলেছে, ইশরাকের বিষয়ে মন্ত্রণালয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে রিট আবেদনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আসার পর। এতে বলা হয়, ইশরাক হোসেনের রায়ের বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরে এবং শপথ আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ গত ২৮ এপ্রিল লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।

মো. মামুনুর রশিদ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের ২৭ মার্চের রায় ও ডিক্রি, নির্বাচন কমিশনের ২৭ এপ্রিল করা সংশোধিত গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন। ওই রিট মামলায় ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো থেকে বিরত থাকতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও প্রতারণামূলক রায় দেওয়ার জন্য নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হাইকোর্টে রিট মামলা বিচারাধীন অবস্থায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী এমন আন্দোলন আদালতের প্রতি অনাস্থা অথবা অবমাননার শামিল। নাগরিক সেবা ব্যাহত ও অচলাবস্থা দূর করতে আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গেল ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল। রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.