টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। সাদা পোশাকে ১৪ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন ভারতের ক্রিকেটের সাম্পতিক সময়ের সবচেয়ে বড় মহাতারকা।
সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে কোহলি লিখেছেন, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবার ব্যাগি ব্লু জার্সি পরেছিলাম আজ থেকে ১৪ বছর আগে। সত্যি বলতে, কখনও কল্পনাও করিনি এই ফরম্যাট আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। এটি আমাকে পরীক্ষায় ফেলেছে, গড়েছে এবং এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছে, যা আমি সারা জীবন বহন করবো।
২০১১ সালের মাঝামাঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল কোহলির। শুরুটা ছিল বেশ নীরব। কিংস্টনে প্রথম ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৪ ও ১৫ রান। পুরো সফরে পাঁচ ইনিংসে করেন ৭৬ রান। তবে সে বছরের শেষদিকে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫২ ও ৬৩ রানের দুটি ইনিংস খেলে টেস্টে নিজের সামর্থ্যের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১১-১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যাট হাতে ধুঁকলেও শেষ টেস্টে অ্যাডিলেডে করেন নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে কোহলির আসল উত্থান ২০১৪-১৫ অস্ট্রেলিয়া সফরেই। সেই সিরিজে অ্যাডিলেডে দুটি সেঞ্চুরি, এরপর মেলবোর্ন ও সিডনিতে আরও দুটি সেঞ্চুরি—সিরিজজুড়ে ৮৬.৫০ গড়ে ৬৯২ রান করেন তিনি। তখনই টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। কেননা মহেন্দ্র সিং ধোনি প্রথম টেস্টে চোটে পড়েছিলেন। পরে ধোনি তৃতীয় টেস্ট শেষে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিলে পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব কোহলির কাঁধে আসে।
কোহলির অধিনায়কত্বে ভারতের টেস্ট দলের এক স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। তার অধীনে ৬৮ ম্যাচে ভারত জিতেছে ৪০টি, হেরেছে মাত্র ১৭টি। এতে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক, পেছনে ফেলেন ধোনি (৬০ ম্যাচে ২৭ জয়) ও সৌরভ গাঙ্গুলিকে (৪৯ ম্যাচে ২১ জয়)। বিশ্বের সফলতম টেস্ট অধিনায়কদের তালিকায়ও তিনি চতুর্থ। শীর্ষে রয়েছেন গ্রায়েম স্মিথ (১০৯ ম্যাচে ৫৩ জয়)।
২০১৮ সালের ইংল্যান্ড সফর ছিল কোহলির ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক। আগের সফরে ব্যর্থতা ভুলিয়ে দিয়ে তিনি পাঁচ টেস্টে করেছিলেন ৫৮৩ রান, গড় ছিল ৫৯.৩০। ওই বছরই তিনি এক পঞ্জিকাবর্ষে করেছিলেন সর্বোচ্চ ১৩২২ রান। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়টায় কোহলি ছিলেন অনবদ্য। ২০১৬ সালে তার গড় ছিল ৭৫.৯৩, ২০১৭ তে ৭৫.৬৪, ২০১৮ তে ৫৫.০৮, আর ২০১৯ এ ৬৮.০০। এই সময়ে তিনি ৩৫ টেস্টে ৩৫৯৬ রান করেছিলেন, গড় ছিল ৬৬.৫৯। এই সময়ের মধ্যে তার ব্যাটে এসেছিল ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৮টি হাফ সেঞ্চুরি।
সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে কোহলির ব্যাট থেকে সেই ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। ২০২৪ সালের নভেম্বরে পার্থ টেস্টে শতক হাঁকানোর আগে তার শেষ শতক ছিল ২০২৩ সালের জুলাইয়ে, পোর্ট অব স্পেনে। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস- ২০১৯ সালে পুণেতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ২৫৪ রান করার পর তার গড় যেখানে ছিল ৫৫.১০, গত দুই বছরে তা নেমে এসেছে ৩২.৫৬ এ।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩৬ বছর বয়সী কোহলি ১২৩টি ম্যাচ খেলেছেন। এর মধ্যে ৬৮টিতে ছিলেন অধিনায়ক। সবমিলিয়ে টেস্টে তার রান ৯ হাজার ২৩০, গড় ৪৬.৮৫। সেঞ্চুরি ৩০টি, হাফ সেঞ্চুরি ৩১টি।
এর আগে গত বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন কোহলি। তিনি এখন থেকে কেবল ওয়ানডে খেলবেন।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.