যে কারণে লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ১৭ ব্যাংক

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের লভ্যাংশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষার পালা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আইনী জটিলতায় আটকে গেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা। ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত পরিপালন নিয়ে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের সর্বশেষ বছরের (২০২৪) আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে পারেনি। ফলে লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ জটিলতার কারণে পর্ষদ সভার ঘোষণা দিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে অনেক ব্যাংককে। কোনো কোনো ব্যাংকের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হলেও তাতে সর্বশেষ হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়নি। কিছু ব্যাংক আবার পর্ষদ সভা স্থগিত করেছে। ঘোষিত পর্ষদ সভায় সর্বশেষ বছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

এদিকে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আইনী সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে কার্যকর গাইডলাইন ও নির্দেশনা দিতে না পেরে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে বাড়তি সময় দেওয়ার বিষয়ে সরকারের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

দেশের ব্যাংকগুলোকে হিসাববছর হিসেবে ক্যালেন্ডার বছরকে অনুসরণ করে থাকে। গত ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে এদের হিসাববছর শেষ হয়েছে। বিধি অনুসারে, হিসাববছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও প্রকাশ করতে হয়। গত ৩০ এপ্রিল এ সময় শেষ হয়েছে। শেষ দিন প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু সৃষ্ট জটিলতার কারণে ১৭টি ব্যাংক তাদের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। এদের কয়েকটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত হলেও ওই সভার আলোচ্যসূচি থেকে আর্থিক প্রতিবেদনকে বাদ দেওয়া হয়। অন্যগুলো ওই পথে না গিয়ে সরাসরি সভাই স্থগিত করেন। আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত না হওয়ায় লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

যেসব ব্যাংক তাদের ঘোষিত পর্ষদ সভা স্থগিত করেছে অথবা আলোচ্যসূচি থেকে আর্থিক প্রতিবেদন বাদ রেখেছে, তারা এ তথ্য দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে-ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এসবিএসি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক  ও এবি ব্যাংক।

নিয়ম অনুসারে, প্রত্যেক তফসিলি ব্যাংককে লভ্যাংশ ঘোষণার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এবার নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ নানা ইস্যুতে ছাড়পত্র নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। বিধি অনুসারে,  প্রতিটি ব্যাংককে তাদের খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ নির্দেশনায় বলেছে, যারা সঞ্চিতি রাখার শর্ত পরিপালন করতে পারেনি বা এর জন্য সময় নিয়েছে তারা লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। অন্যদিকে গত ৫ আগস্টের পর ব্যাংকগুলোতে মালিকানা পরিবর্তনের পর নানা কৌশলে আড়ালে রাখা অনেক খেলাপি ঋণের তথ্য বের হয়ে আসছে। এদিকে পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকও আইনকানুন প্রয়োগে আগের চেয়ে কঠোর অবস্থানে। এ অবস্থায় খেলাপি ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। আর এ থেকেই তৈরি হয়েছে জটিলতা যাতে আটকে গেছে বেশিরভাগ ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.