কুমিল্লা, চাঁদপুর, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় বজ্রাঘাতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কৃষক। রোববার ও সোমবার বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটে।
তার মধ্যে কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে কুমিল্লার বরুড়া ও মুরাদনগর উপজেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামে বজ্রাঘাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা উভয়েই বড়হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। নিহত কিশোর দুজন হলো- পয়ালগচ্ছ গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন (১৩)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে হালকা মেঘ থাকা সত্ত্বেও শিশুরা মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ বজ্রাঘাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মকভাবে আহত হয়। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু ঘোষণা করেন।
অপরদিকে কুমিল্লার মুরাদনগরে কৃষিজমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৩ জন। এ ঘটনার পর থেকে তারা শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন- বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কোরবানপুর গ্রামের বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও আন্দকুট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুরাদনগর উপজেলার ৪ নম্বর পূর্বধৈইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশে এই বজ্রাঘাতের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে কৃষক নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ও জুয়েল ভুঁইয়া জমিতে ধানকাটার কাজ করতে যায়। হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়ে ঝড়ের সঙ্গে বিকট শব্দে কৃষিজমিতে বজ্রাঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান জানান, কৃষিকাজ করতে গিয়ে কোরবানপুর গ্রামে বজ্রাঘাতে দুই জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের মরদেহ পরিবারের নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রাঘাতে বিশাখা (৩৫) নামে এক কৃষাণীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কচুয়া উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক হরিপদ তার স্ত্রী বিশাখাকে নিয়ে বাড়ির পাশে নাহারা মাঠে ধান কাটতে যায়। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রাঘাতে বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশাখাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা গেছে, বিশাখার কোনও ছেলেসন্তান নাই। স্বামী ও ৩ কন্যাসন্তান নিয়ে তাদের অভাবের সংসার। বিশাখার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসলে স্বজনদের আহাজারিতে ওই বাড়িতে শোকের মাতম বিরাজ করে।
কিশোরগঞ্জের দুই হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রাঘাতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- ইন্দ্রজিৎ দাস (৩৫), স্বাধীন মিয়া (১৪) নামে দুই কৃষক ও ফুলেছা বেগম (৬৫) নামে এক কৃষাণী।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে অষ্টগ্রামের হাওরে ধান কাটতে গেলে পৃথক বজ্রাঘাতে উল্লিখিত দুই জন কৃষক ও মিঠামইনে নিজের খলায় ধানের খড় ঢাকতে গেলে ফুলেছা বেগমের এ মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিহত ইন্দ্রজিৎ দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত জতীন্দ্র দাসের পুত্র ও স্বাধীন মিয়া খয়েরপুর-আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিছ মিয়ার পুত্র ও ফুলেছা বেগম মিঠামইন উপজেলার কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মৃত আশ্রব আলীর স্ত্রী।
অষ্টগ্রাম থানার ওসি রুহুল আমিন ও মিঠামইন থানার এএসআই দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেত্রকোনায় পৃথক স্থানে বজ্রাঘাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে জেলার মদন উপজেলায় আরাফাত (১০) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর আগে রবিবার দিনগত রাতে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় দিদারুল হক (২৫) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষক মারা যান।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান এবং কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
শিশু আরাফাত মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে এবং দিদারুল হক কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধুনন্দ গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
জানা গেছে, আরাফাত বাড়ির পাশের একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। প্রতিদিনের মতো সোমবার ভোরে ফজরের নামাজ শেষে মা-বাবাকে বলে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল সে। মাদ্রাসার কাছে পৌঁছাতেই হঠাৎ বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় আরাফাতের।
অপরদিকে, কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের হাফসা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা ও আন নূর ইসলামি একাডেমির শিক্ষক দিদারুল হক স্থানীয় বাজার থেকে রবিবার রাতে মাদ্রাসায় ফিরছিলেন। এ সময় বৃষ্টি শুরু হলে হঠাৎ বজ্রাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে আজ সকালে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রিমন আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এবং শাল্লা ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
জানা যায়, সকালে গ্রামের পাশের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন তালুকদার। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন তালুকদার নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.