বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে আগামীকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) বসছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দেশের প্রথম উৎসব ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫’। ২৩-২৪ এপ্রিল দুই দিনজুড়ে চলবে এই উৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ বৈশ্বিক প্রচারণা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার রাজধানীতে বিশেষ র্যালি ও ফ্ল্যাশ মবের আয়োজন করা হয়। এসময় জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ডাক দেওয়া হয় এবং এদিন সংবাদ সম্মেলনে রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্টের লক্ষ্য ও কর্মসূচি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
একশনএইড বাংলাদেশ, বুয়েট এবং জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (জেটনেট-বিডি) এর যৌথ উদ্যোগে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
কর্মসূচির প্রথম দিন সকাল ১০টায় সূর্যোদয় যুব সংঘের ২০ জন সদস্যের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় মনোমুগ্ধকর ফ্ল্যাশ মব। চার মিনিটের এই পরিবেশনার মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা ছেড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ধাবিত হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়। অংশগ্রহণকারীরা সৌর প্যানেল, বায়ু টারবাইন ও গ্রহের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে এবং “ফসিল বাদ দাও—ভবিষ্যতের দিকে চলো!” স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখরিত করে তোলে। প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষী এই মনোজ্ঞ পরিবেশনা উপভোগ করেন।
পরে দোয়েল চত্বর থেকে তারুণ্যদীপ্ত র্যালি শুরু হয়ে শিক্ষা ভবন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এই প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ র্যালির মধ্য দিয়ে দেশের ১০ যুব সংগঠনের দেড় শতাধিক তরুণ জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান। এসময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে এই মর্মে ‘ডোন্ট সেল আওয়ার ফিউচার’ ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’সহ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন র্যালিতে যোগ দেওয়া জলবায়ু কর্মীরা।
সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত হয় এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলন। একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রতিষ্ঠানটির জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউএবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মুকাদ্দিম সারওয়ার, জেটনেট-বিডির সমন্বয়ক কমিটির সদস্য রাশেদ ইবনে ওবায়েদ রিপন ও সিটি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্টের লক্ষ্য, কর্মসূচিসহ বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জরুরি প্রয়োজনীয়তা এবং এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা হয়।
ন্যায্য, টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে সবাইকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “আজকের এই ফ্ল্যাশ মব ও র্যালি প্রমাণ করে যে আমাদের যুব সমাজ একটি ন্যায্য ও টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ চায়। জীবাশ্ম জ্বালানির দূষণ থেকে মুক্তি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে একটি সবুজ বাংলাদেশ নির্মাণে সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই উৎসব সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
লিখিত বক্তব্যে জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন টিমের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই উৎসবে সরকারি–বেসরকারি সংস্থা, বিশেষজ্ঞ ও তরুণ প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য–সংলাপ ও উদ্ভাবনী মেলার মাধ্যমে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উদ্ভাবন তুলে ধরা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। উদ্ভাবন মেলা ও ইয়ুথ হাব তরুণদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। সমাপনীতে স্থানীয় উদ্ভাবকদের আইডিয়া উপস্থাপন এবং সেরা উদ্ভাবকদের পুরস্কৃত করা হবে। এই উৎসব সবুজ ও ন্যায্য ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার।”



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.