বর্ণিল আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়েছে এবারের ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে চারুকলা প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবের রঙে রাঙানো। ভোরের আলো ফুটতেই জনস্রোত জমতে শুরু করে। রমনা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায়ও ছিল মানুষের ঢল।
শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও মানুষ এসেছেন এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নিতে। হলুদ, লাল, সবুজ ও কমলা রঙের পোশাকে সেজেছেন সবাই। নারীদের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়ি এবং শিশুদের মুখে উচ্ছ্বাস-সব মিলিয়ে ছিল প্রাণবন্ত পরিবেশ। ছোট ছোট মুখোশ পরে এবং হাতে পতাকা নিয়ে আনন্দ মিছিলে অংশ নেয় তারা।
মায়ের হাত ধরে প্রথমবারের মতো পয়লা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় এসেছে দুই ভাই-বোন সামারা বিন্তে সাঈদ ও আয়াত খান মূসা। সামারা আগেই এমন আয়োজনে এসেছে কিন্তু মূসার জন্য এবারই প্রথম। শোভাযাত্রার বাঁধভাঙা উল্লাস শেষে মুখে রং তুলির আঁচড়ে ‘শুভ নববর্ষ’ লেখার আবদার হলো তাদের পূর্ণ। তাই তাদের আজ বাধভাঙা উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। সেই একি অনুভূতি বাবার হাত ধরে শোভাযাত্রায় আসা সহোদর রাতুল ও সাইফের। গাল রঙিন করার পর হাতে তারা চরকি নিয়ে জানালো তাদের আনন্দের কথা।
এ ছাড়া বর্ষবরণ আয়োজনে ঘুরতে আসা শিরিন আক্তার জানান, আমি একজন কর্মজীবী মহিলা। এমনিতে সময় পাই না, একটু সময় পেলেই বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। আজ এখানে এসে অনেক বেশি ভালো লাগছে,আমার ছেলে-মেয়েও অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত। আমি চাই আমার দুই সন্তান আবহমান বাংলার সংস্কৃতি জেনে দেশ ও মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ বেড়ে উঠুক।
এদিকে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী এবং নানা বয়সী মানুষ। এতে মুখোশ, পাপেট, বাঁশের তৈরি বাঘ, পাখি, মাছসহ নানা বিশালাকৃতির শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতিনির্ভর মানুষের সংগ্রামের রূপ। ১৯৮৯ সালে চারুকলায় আনন্দ শোভাযাত্রা নামে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল। পরে ১৯৯৬ সালে এটিকে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম দেওয়া হয়। এবার কর্তৃপক্ষ এটিকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা নাম দিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.