ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অবৈধভাবে চলা মিনি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। মঙ্গলবার বিকালে পরিদর্শন শেষে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে চলা চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে ৪৮টি দেশীয় বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়েছে।
এ সময় ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, “দেশি অথবা বিদেশি যেকোনো পশুপাখির জন্যই এখানকার পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। এরপরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪৮টি দেশীয় প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। এর মধ্যে ২৭টি আমরা নিয়ে যাচ্ছি। বাকিগুলো চিকিৎসার জন্য এখানেই থাকবে।”
এখন থেকে আর চিড়িয়াখানাটিতে দর্শণার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না। চিড়িয়াখানাটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান নার্গিস সুলতানা।
‘ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এই অভিযান চালাল।
সরেজমিনে মিনি চিড়িয়াখানায় দেখা যায়, ‘খাঁচায় থাকা দুটি ভালুকের মধ্যে একটির শরীরে পচন ধরেছে। প্রাণীটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে ভালুকটি। ক্ষতস্থানে হলুদের গুঁড়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে অতিরিক্ত দুর্বল থাকায় এই মুহূর্তে অসুস্থ ভালুকটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না বলে জানান বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা রথীন্দ্র্র কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভালুকটির নিয়মিত চিকিৎসা করবেন। যখন সুস্থ হবে তখন আমরা নিয়ে যাব।”
জানা যায়, ২০১৩ সালের দিকে নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানা গড়ে তোলা হয়। হরিণ, ভালুক, কুমির, হনুমান, গাধা, অজগরসহ ২৪ প্রজাতির প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। তবে মেছো বাঘের মৃত্যুর পর বর্তমানে সেখানে ২৩ প্রজাতির ১১৪টি প্রাণী আছে। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চিড়িয়াখানাটি।
মসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ২ নম্বর প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমানের শ্যালকের নামে চিড়িয়াখানাটির জায়গা বরাদ্দ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা সিদ্দীকুর রহমান।
জব্দ করা প্রাণীগুলোর মধ্যে কিছু গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হবে; বাকিগুলো অবমুক্ত করা হবে জানিয়ে রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, “মিনি চিরিয়াখানাটি অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যার কারণে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.