জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে যেসব বক্তব্য আসছে, তাতে পরিষ্কার কোনো বার্তা নেই বলে মনে করছে বিএনপি। বরং দেশে নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে জনমনে। এ অবস্থায় সরকারের ভাবনা জানতে এবং নিজেদের অবস্থান জানাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গতকাল মঙ্গলবার সময় চাওয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক যত সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। বাকি সংস্কার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে করা যাবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে দলের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে তারা দু-একটি কর্মসূচি দেওয়ার কথাও চিন্তা করছে।
স্থায়ী কমিটি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ বড় পরিসরে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকাসহ মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। বৈঠকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা। কয়েক মাস ধরে বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়ে আসছিল। এ বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য জানতে চাইবে বিএনপি। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলতে চায় তারা।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, বিএনপি যেহেতু এই সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে, সে কারণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া– এসব বিবেচনায় নিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে।
দলটি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন হলে দেশে বিদ্যমান নানা সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন। চিকিৎসার জন্য গত রোববার সিঙ্গাপুর গেছেন বিএনপি মহাসচিব। সপ্তাহখানেক পর তাঁর ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
বৈঠকের আলোচ্যসূচির মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ও সংস্কারের ইস্যু ছিল অন্যতম। বিএনপি গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর দলীয় মতামত জমা দিয়েছে। সেখানে সংস্কারের পক্ষেই দলটির মতামত রয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি আগে থেকেই বলে আসছে, সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়– এমন প্রয়োজনীয় সংস্কার ঐক্যের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে করা সম্ভব। নির্বাচন আয়োজনে দরকার এমন সংস্কারের জন্য একই পথ অবলম্বন করা যায়। এর জন্য সময়ক্ষেপণের দরকার নেই।
 
			
 
						

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.