সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে চাপ নেই: আলী রীয়াজ

সংস্কার না আগে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো ধরনের চাপে নেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা তাই করছি।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সকাল ১০টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংসদ ভবনে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে একথা বলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ ।

এর আগে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে সংস্কার প্রস্তাবের লিখিত কপি জমা দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।

জামায়াতের নেতারা সংবিধান; নির্বাচন; বিচার বিভাগ; জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রস্তাব পেশ করেন। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আমিরে জামায়াতসহ নেতারা প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বারবার বলে আসছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের ব্যাপারে একটি ধারণা জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। আমরা তার সাথে দ্বিমত পোষণ করিনি। আজকে আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।

তিনি উল্লেখ করেন, কমিশনের প্রস্তাবের সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি; আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ শুরু করবেন।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সংস্কার প্রস্তাব জমা শেষে রাজনৈতিক কোনো চাপে রয়েছে কিনা কমিশন? জানতে চাইলে কমিশন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস। সুতরাং চাপের কোনো প্রশ্ন আসে না বা দেখতে পাই না। রাজনৈতিক দলগুলো বলবে, তাদের দায়িত্ব সুপারিশ তুলে ধরা। সেটার প্রক্রিয়াই চলছে। আমরা তাদের দেওয়া সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করে সংস্কারের জন্য একটা জায়গায় যেতে চাই। সুতরাং আমরা চাপে নেই।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা জাতীয় সংস্কারে মতামত চেয়েছিলাম। আমরা এরইমধ্যে অধিকাংশ দলের কাছ থেকে মতামত পেতে শুরু করেছি, কিছু পেয়েছিও। তার ভিত্তিতে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। আগামী কয়েকদিন অর্থাৎ বেশ কয়েকদিন ছুটি আছে সামনে। তার আগেই আমরা অন্তত চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করবো। ছুটিতেও যোগাযোগ থাকবে। তবে ঈদের পর আলোচনা আবার শুরু হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব মতামত আসছে, বক্তব্য শুনেছি সেসব পর্যালোচনা করছি। আমরা আশা করছি যে, বিভিন্ন বিষয়ে আমরা একমতের বিষয়ে আসতে পারবো। যেসব মতামত আসছে ও জনসম্মুখে তারা যা বলেছে তাতে আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কারের ব্যাপারে কোনো ধরনের সংশয়-দ্বিধা নেই। রাজনৈতিক দলগুলো চায় যে, এখনকার যে পরিস্থিতি তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ সংস্কার।

দ্বিতীয়ত, যে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায় তারা সহযোগিতা করেছে, করছে, অব্যাহত রেখেছে। আমরা মনে করি সংস্কারের ব্যাপারে আমরা অগ্রসর হবো। কতোটা সময় লাগবে তা নির্ভর করছে যে, আলোচনাটা কীভাবে অগ্রসর করছি। আমাদের লক্ষ্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সময়সীমা পনোরো জুলাই। আমরা এর মধ্যেই কাজ শেষ করতে চাই। আমরা আশা করছি এর আগে শেষ হবে। আমরা স্বচ্ছতা অবলম্বন করছি, জানবেন কীভাবে অগ্রসর হচ্ছি। তবে প্রতিদিন আমরা ব্রিফ করবো না। যখন একটা পরিস্থিতিতে যাবো তখন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা জানাবো। আপনাদের মাধ্যমে জাতি জানতে পারবে। রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত সুচিন্তিত সুনামের সঙ্গে মতামতগুলো জানাচ্ছে, বলেন তিনি।

বিএনপির পক্ষ থেকে কি মতামত দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এখনো মতামত দেয়নি বিএনপি। আগামী দু-একদিনের মধ্যে আশা করি বিএনপি মতামত দেবে। আর আগামী দুই বা তিন দিনের মধ্যে ছাত্রদের সংগঠন এনসিপির পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হচ্ছে না। তাদের মতামত পাওয়া গেলে ঈদের পর থেকে অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.