স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের পথে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। যেহেতু দেশটি একক খাতের রপ্তানির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, তাই বৈচিত্র্যকরণ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই রপ্তানি বৈচিত্র্য আনতে হবে, তা আমরা এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হই বা না হই। উত্তরণের প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে আমাদের অবশ্যই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আমরা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা ও শুল্ক সুরক্ষা হারাব। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা এসইপিএ, পিটিএ ও এফটিএ চুক্তি নিয়ে কাজ করছি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি রাতারাতি নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে এটি কঠিন করে তোলা যেতে পারে। আমাদের ধাপে ধাপে এটি কমিয়ে আনতে হবে, এবং ইতোমধ্যেই তা কমছে।
বিশ্ববাজারে হালাল পণ্যের বিশাল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শুধু কোনো ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সার্টিফিকেট নিলেই চলবে না; বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী [আওয়ামী লীগ] শাসনামলে ক্যাপিটাল ফর্মেশন সম্পূর্ণরূপে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একটি সুপরিকল্পিত এলডিসি উত্তরণ কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।’
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, সরকার এসইপিএ, পিটিএ ও এফটিএসহ ৩৩টি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কাজ করছে। এসব চুক্তির মধ্যে জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সেক্টর নেতাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই এবং ভারতের মতো করে রপ্তানিকারকদের উদ্ভাবনী সহায়তা দিতে চাই। চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাণিজ্য সহজীকরণই বৈচিত্র্যকরণের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা ১০ শতাংশ খরচ সাশ্রয় করতে পারতাম, তাহলে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার প্রয়োজন হতো না।’
তিনি আরও বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের পর কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সরকারি নীতিমালা অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সহায়তা না করলে এবং ব্যবসার পরিবেশ সহজ না হলে কেবল বেসরকারি খাত প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জন করতে পারবে না।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.