দেশে বর্তমানে ব্যাংক খাতে কর্মরত নারীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৪৯ জন। এই নারীদের মধ্যে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে বসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনেকে। আবার ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন নারীরা। উচ্চপদ অর্থাৎ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে নারীর সংখ্যা এখনো হাতেগোনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বরাবরই নারীর প্রতি সংঘটিত হওয়া লিঙ্গবৈষম্যের অন্যতম পুঁজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে নারীর মাতৃত্ব। মাতৃত্বের দোহাই দিয়ে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে প্রতিনিয়ত। আমাদের সমাজে নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশ নেওয়ার অন্যতম বাধা সমাজে সন্তান লালনপালন সংক্রান্ত নানা ধারণা ও মানদণ্ডের আতিশয্য। নিন্দুকের কথা অগ্রাহ্য করে যেসব মা সন্তানদের শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রে রেখে চাকরি করছেন, তারাও ভুগছেন নানা মানসিক দ্বন্দ্বে। কারণ সার্বিকভাবে ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন সত্ত্বেও দেশে মানসম্পন্ন ডে কেয়ার বা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের সংখ্যা অপ্রতুল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতের মোট কর্মীর ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ এখন নারী। ক্রমেই বাড়ছে ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ। কারণ ব্যাংকের মোট কর্মী ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বাড়লেও নারী কর্মী বৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সাবলীল পরিবেশ, ভালো বেতন কাঠামো, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা সুবিধা থাকায় ব্যাংকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছেন দেশের নারীরা। সব খাতে এমন অবস্থা নেই। কমবেশি সব চাকরিতেই চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও দিন দিন সেবা খাতে নারীদের অবদান বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ওপর ভর করে ব্যাংক খাতে মোট নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৩ সালে ব্যাংক খাতের মোট নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৩৪৬ জন। আর এক বছর পর অর্থাৎ ২০২৪ সাল শেষে নারীদের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ হাজার ৬৪৯ জনে পৌঁছেছে। সেই হিসাবে এক বছরে নারী কর্মী বৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে ব্যাংকের মোট কর্মীর সংখ্যা ২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৬ জন থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৫ জনে পৌঁছেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, এখন ব্যাংক খাতের প্রারম্ভিক পর্যায়ে কাজ করছেন-এমন নারীর সংখ্যা ১৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে ১৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আর ব্যাংকের উচ্চ স্তরে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ব্যাংকে তিন স্তরে নারী কর্মীর অংশগ্রহণে এই
সংখ্যা গত তিন বছরে অল্প অল্প করে বেড়েছে। এদিকে ২০২৪ সালের শেষে ব্যাংকের বোর্ড বা পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণ খানিক বেড়ে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।
দেশে বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১৯টি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে কিছু শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।
কর্মজীবী নারী যাতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য ১৯৯১ সালে নারীর নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে কাজ করার জন্য সরকারিভাবে প্রথমবার ডে কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়। এরপর কেটে গেছে দুই দশকেরও বেশি সময়। এত বছরেও উন্নতমানের কোনো সরকারি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র নির্মিত হয়নি। যে কয়টি আছে, সেগুলোর মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কিছুদিন আগেই ঢাকার আজিমপুরে একটি সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে ১১ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রগুলোয় যে পরিমাণ লোকবল থাকা প্রয়োজন, তা নেই। তার ওপর সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন নির্ধারিত থাকায়ও বিপাকে পড়তে হয় মায়েদের, কারণ বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রেই এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।
বেসরকারি মালিকানায় বেশকিছু ডে কেয়ার সেন্টার গড়ে উঠলেও সেগুলোর মান শতভাগ সন্তোষজনক নয়। তার ওপর আবার সেগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কিছু বেসরকারি ডে কেয়ার শিশুদের খাবারের দায়িত্ব নিলেও বেশিরভাগই তা এড়িয়ে যায়। সেইসঙ্গে ঘড়ির কাঁটা ধরে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শিশুদের সেবা দেওয়ার সময় নির্ধারিত থাকায় জ্যামের নগরীতে সন্তান সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান মায়েরা।
অর্থসূচক/
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.